টগবগে যুবক। প্রাণের আবেগ ধরে রাখতে পারি না। উনসত্তরে বেলবটমের যুগ শুরু হয়েছে। সবাই বেলবটম পড়ে পাড়ায় মহল্লায় আড্ডা দিচ্ছি। আমাদের আচরণ পাক আর্মির ভালো লাগলো না। পাক আর্মির একটা গাড়ী এসে আমাদের আড্ডার পাশ থামলো। পালানোর উপায় নাই। শরীরটা হিম হয়ে আসছে। একজন একজন করে ইশারায় ডাক পড়লো।
আলম গিয়ে দাঁড়াতেই একজন কাঁচি দিয়ে প্যান্টের বেলবটম অংশে ছেঁটে দিল। আলমের চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। একে একে সবার বেলবটম ছাঁটা হলো। আমিও বাদ পড়লাম না। সবাই বেলবটম পড়ছে দেখে বৃত্তির টাকাটা তুলে বেলবটমটা বানিয়ে ছিলাম। কষ্ট পেলাম।
লম্বা চুল। জুলফি রাখা ছিল তখন তারণ্যের ফ্যাসান। লম্বা চুল, লম্বা মোটা জুলফি না থাকলে নিজেকে পুরুষ মনে হয় না। সবাই রাখছে আমিও লম্বা চুল রাখলাম। সাথে লম্বা জুলফি।
রাসত্মাগুলো গর্জে উঠেছে। স্লোগানের শব্দও জোরালো হচ্ছে। পাকিসত্মানী সেনাবাহিনীর মেসিনগান, গাড়ীর আওয়াজও বাড়ছে। রাজশাহী কলেজের নিউ হোষ্টেল থেকে বিকালে বাহির হলাম। উদ্দেশ্য সাহেব বাজারে রহমানিয়া হোটেলে আলুর সিংগাড়া সাথে এককাপ চা খাবো। চা-সিংগাড়া খেয়ে ফুরফুরে মেজাজে বের হলাম।
পড়বি কি পড় যমের ঘাড়ে। এক পাক সেনা বললেন।
-‘‘ এ কিয়া হাই।’’ জবাবে বললাম;
-‘‘ কিসের কথা বলছে।’’ সংগে সংগে আমার জুলফি ধরে টান দিলো। কয়েকটা চুল উপড়ে গেছে। ব্যাথায় চিৎকার দিচ্ছি।
-‘‘ মাদারচোদ ’’ বলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে একজনের সামনে ঠেলে দিলো। হাতে একটা খুর। ভয় পেলাম। গলায় বসিয়ে না দেয়। মাথায় পানি দিয়ে ব্যাটা আমার মাথাটা ন্যাড়া করে দিলো।
আমাদের একজন শিক্ষক বেলবটম, লম্বাচুল, জুলফি একদম পছন্দ করতেন না। পাক আর্মির বেলবটম ছাঁটা, মাথা ন্যাড়ে করা দেয়া খুব পছন্দ করতেন। পাক আর্মির প্রসংশা শুনে নিজেকে চেপে রাখতে পারলাম না। আক্রমনাত্তক ভাবে তাঁর কাছে জানতে চাইলাম,
-‘‘ আমি বেলবটম পরলে আপনার কি ? এতে পাক আর্মির ক্ষতি কি ? আমি কি উলংগ আছি ?’’ জবাবে জানালেন;
-‘‘ আমার ভালো লাগে না। তাই পছন্দ করি না। পাক আর্মি এটাকে উৎশৃংখলার প্রতীক ভাবে তাই পছন্দ করে না। তাঁরাও চাই না, এসব ছেলেরা পরুক।’’ ক্ষুব্ধ হয়ে বললাম;
-‘‘ তাঁদের চাওয়াটাই কি সব। আমাদের কোন চাওয়া পাওয়া নাই।’’ শিক্ষক মশাই এর সাফ জবাব;
-‘‘ না, নাই।’’ জানতে চাইলাম;
-‘‘ কেন নাই। কেন থাকবে না।’’ জবাবে তিনি বললেন;
-‘‘ বেয়াদবের মত তর্ক করো না। যাও, ন্যাড়া হয়েছো। ভাগ্য ভালো এখনো মাথাটা আছে। এমন বেয়াদবী করলে মাথাটাও হারাতে পারো।’’
সত্তরের আগে আমাদের কোন কিছু চাওয়ার ছিল না। চাওয়া পাওয়ার সবকিছুর দাবীদার পাক আর্মি। তাঁরা চাই না তাই আমরা বেলবটম পড়তে পারি না। তাঁদের খারাপ লাগে তাই আমরা লম্বা চুল রাখতে পারি না। সত্তরের পরে দেশ স্বাধীন হলো। পাক আর্মি বিদায় নিয়েছে। সব কিছু ওলোট পালট। স্বাধীন দেশের টগবগে যুবক। সরকারের কাছে পাহাড় সমান প্রত্যাশা। অন্ন চাই, বস্ত্র চাই। যুদ্ধ বিদ্ধস্থ দেশ। কেউ শোনে না। চারি দিকে শুধু চাই-চাই।
-‘‘ কে দিবে ?’’
দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু রাজশাহী মাদ্রা্সা মাঠে বললেন;
-‘‘ তিন বছর তোমাদের কিছুই দিবার পারমু না, রাজি।’’ সবাই দু’হাত তুলে সম্মতি জানালো। মনে
মনে ভাবলাম, বাঁচা গেল। চাই চাই কমবে। আশায় গুড়ে বালি, ‘চাই চাই দিন দিন বাড়তে থাকলো।’’
হঠাৎ করে রফিক আজাদ, গর্জে উঠলেন। আর চাই নয়। আক্রমন;
-‘‘ ভাত দে হারাম জাদা, নইলে মানচিত্র খাবো।’’
আমরা ভাত খাই, পানি খাই, সিগারেটও খাই। বড় বভুক্ষ জাতি। তবুও আগে কখনও মানচিত্র খাওয়ার কথা শুনিনি। এটাও শুনছি। নিজের চোখ কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না। বেলবটম পড়তে চেয়ে ছিলাম, পারিনি, পাক আর্মি ছেঁটে দিয়েছিলো। লম্বা চুল ন্যাড়া হতে হয়েছিল।
আজকে সবাই চায়, পাক আর্মি নাই। সবাই চাইতে পারে। শুরুতে চাইতে ছিল, এখন ধমক দিচ্ছে। বুঝলাম আমরা স্বাধীন হয়েছি।
চাই, পাই বা না পাই। এখন চাইতে পারি। ক’দিন আগে এটাও পারতাম না। যা আছে এখন তা ভোগ তো করতে পারি। চেয়ে চেয়ে দেখছি,
ছেলেরা বেলবটম পড়ে দিবিব ঘুরে বেড়াচ্ছে। লম্বা চুল, পিছন থেকে বোঝার উপায় নাই ছেলে কি মেয়ে। আজকাল চুলের সাথে যোগ হয়েছে লম্বা দাড়ি। মাঝে মধ্যে দু’একজনকে সাধু সন্যাসী বলে ভুল করি।
সংবিধানে অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষার নিশ্চয়তা সরকারকে দেয়া আছে। কালের পরিক্রমায় বাংলাদেশের মানুষের গড়পড়তা এগুলো জুটেছে। তাই রাজপথে কিছু ভিক্ষুককে ভিক্ষা করতে দেখি, অন্ন চাই, বস্ত্র চাই, এ স্লোগান গুলো আর শুনতে পাই না। এগুলো নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। দেখা দিয়েছে নতুন উপসর্গ।
-‘‘ জানতে হবে। জানতে চাই। জানতে দিতে হবে।’’
প্রথম দিকে দাবীটা জোড়ালো ছিল না। সিভিল সোসাইটির সদস্যরা এ সব নিয়ে মাতামাতি করতো। ভাবতাম এ তাঁদের খেয়াল। সুখে থাকলে ভুতে কিলায়।
পৃথিবী জুড়ে দূর্ণীতি বাড়ছে। আমাদের মত গরীব দেশ গুলোর মানুষজন মোটা ভাত মোটা কাপড় নিয়েই খুশি ছিল। চিকন কাপড়, বালাম চাল এ সব চিনতো না। স্বাধীনতার সুবাদে মোটা কাপড়, মোটা চাল খাওয়া মানুষ গুলো বিদেশ যেতে শুরু করলো। তাঁরা বুঝতে শুরু করছে তাঁরা গরীব। চিকন কাপড় চাই, সিদ্ধ চাল আর ভালো লাগে না। চিকন চালের পোলাও দরকার। তার সংগে আসেত্ম আসেত্ম নানা বিধ পানীয় যোগ হলো। বেতনের টাকা দিয়ে এ সব করা যায় না। ছোট খাটো আমদানী রফতানীর লাভ দিয়ে এ খরচ পোষায় না। আরও লাভ চাই। আমদানী করতে কর দিতে হবে। কর দিলে লাভ থাকে না। কর নিলে সরকারের লাভ। সরকারের লাভ হলে চিকন চাল, পানীয় জোটে না। সরকার ব্যবসায়ী একাকার হয়ে গেল। সবার পাতে চিকন চাল, চিকন কাপড়, গেলাসে রংগিন পানীয়, সরকারের কোষাগার শূন্য। সরকারের টনক নড়লো। সরকারের কাজে জনগনের নজরদারী বাড়াতে হবে। সরকার সিদ্ধামত্ম নিলো, জনগনকে তথ্য জানাবে। সরকারী আদেশ জারী হলো,
‘প্রতিটি প্রকল্পের ব্যয়ের হিসাব লিখিত ভাবে জনগনকে জানাতে হবে।’ রাসত্মা তৈরী হচ্ছে। পাশে একটি সাইনবোর্ড লিখা রয়েছে।
‘রাসত্মার দূরত্ব ৫ কিলোমিটার। ৮ ফুট উচু ১২ ফুট চওড়া এ রাসত্মা তৈরীর জন্য মোট বরাদ্দের পরিমান ২০০ মন গম।’
একজন পথচারী জানতে চাইলেন।
-‘‘ ভাই, ফুট কি ?’’ তাঁকে বুঝাতে চেষ্টা করলাম। আবার প্রশ্ন;
-‘‘ এই সাইনবোর্ডটা কেন দিয়েছে ?’’ জবাবে বললাম;
-‘‘ আপনারা যাতে জানতে পারেন সরকার আপনাদের জন্য কি পরিমান খরচ করছে। ঠিকাদার
ঠিকমত কাজ করছে কি না ?’’ জবাবে পথচারী জানালেন;
-‘‘ আমি ফুট চিনি না, কিলোমিটার কি তাও জানি না। জানলেও মাপার যন্ত্র, সময় আমার নাই। সরকারী লোকজন এসব দেখতে পারে না। তাঁরা কি করে ?’’ বললাম;
-‘‘ বুদ্ধিজীবিরা বলছেন ঠিকাদার সরকারী চাকুরে একাকার হয়ে গেছে। তাই আপনাদের নজরদারী বাড়ানোর জন্য এই ব্যবস্থা।’’ পথচারী কিছুক্ষণ বিলবোর্ডটার দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন,
-‘‘ এ টাকাটাও গচ্ছা।’’ বলে হাঁটা দিলেন।
ভাবছি সরকার চাইলেও কোন কিছু করা সম্ভব হবে না। আমরা নিজেরা চাই না। আমরা চাইলেই অনেক কিছু সম্ভব। সিভিল সোসাইটি চায়, তাদের চাওয়ার সংগে জনগনের সম্পৃক্ততা নাই। থাকলে এমনটি হতো না।
আমার এক বন্ধু খুব মজা করতে পারে। তাঁর দুই ছেলে মেয়ে। অনেক দিন পরে দেখা। তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম ছেলে মেয়ে কি করছে? জবাবে জানালো;
-‘‘ ছেলেটা ৯ম শ্রেণীতে, মেয়েটো ৭ম শ্রেণীতে পড়ছে।’’ কেমন করছে জানতে চাইলে বললো;
-‘‘ পরীক্ষা ভালো দেয়। রেজাল্ট ভালো হয় না।’’ অবাক হয়ে বোকারমত জানতে চাইলাম;
-‘‘ এ কেমন কথা। পরীক্ষা ভালো দিলে রেজাল্ট খারাপ হবে কেন ?’’ জবাবে জানালো;
-‘‘ ওরা জানে; আমি চাই ওরা ভালো রেজাল্ট করুক। পরীক্ষা দিয়ে আসলে আমি জিজ্ঞাসা করি, বাবা পরীক্ষা কেমন হয়েছে? জবাবে সব সময় বলে খুব ভালো। পরীক্ষা পর্যমত্ম আমাকে খুশি রাখলো। রেজাল্ট হলে জানলাম ভালো করেনি।’’ জানতে চাইলাম,
-‘‘ তাতে লাভ।’’ জবাব দিলো;
-‘‘ লাভ ক্ষতি বুঝি না। এ ছাড়া কি করবে, ওরা আমার ছেলে মেয়ে না ?’’
কথা বাড়ালাম না। বিদায় নিলাম। মনে পড়লো তাঁর ঢাকায় আসার সময়ের কথা। চাকুরীর জন্য ঢাকা এসেছে। একটার পর একটা পরীক্ষা দিচ্ছে। চাকুরী হচ্ছে না। ঈদে বাড়ী গেলে তাঁর বাবা জানতে চাইলো;
-‘‘ তোর চাকুরী হচ্ছে না কেন বাবা। আর কত দিন বেকার থাকবি। আমি যে আর পারছি না।’’
খুব রেগে গিয়ে সে তাঁর বাবাকে বললো,
-‘‘ আমার কি করার আছে। চাকুরীর জন্য মামা লাগে।’’
আমার বন্ধুর বাবা গ্রামের সহজ সরল মানুষ। ছেলের কথা না বুঝেই জবাব দিলেন;
-‘‘ বাবা তোমার মামা তো আছে। তোমার মায়েরা চার ভাই।’’ ছেলে রেঁগে গিয়ে বললো;
-‘‘ ওসব তোমার মাথায় ডুকবে না। এ মামা আমার মায়ের ভাই নয়। বুঝল্যা, টাকা।’’
-‘‘ টাকা কুনঠে পাবো বাবা।’’ ছেলে বাবাকে রেগে বললো;
-‘‘ তাহিলে দয়া কইরা চুপ থাকো।’’
কথাগুলো শুনছিলাম আর ভাবছিলাম। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশানাল দূর্ণীতির ধারনা সূচক দিয়ে দূর্ণীতি মাপছে। এই মাপে বাংলাদেশ পরপর চার বার ১ম স্থান পেয়েছে। আমার বিশ্বাস হয় না, আমরা এতো দূর্ণীতিবাজ।
অনেক দিন পর কামরুল ভাই দেশে ফিরলেন। খুজে খুজে আমাকে বাহির করলেন। ফিনল্যান্ডে থাকেন। কামরুল ভাই এর বউ ফিনল্যান্ডের। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশানালের হিসাবে বাংলাদেশ দূর্ণীতিতে এক নম্বর। ফিনল্যান্ড দূর্ণীতি মুক্ত দেশ।
কামরুল ভাইকে বললাম;
-‘‘ দূর্ণীতিতে এক নম্বর দেশে আপনার কেমন লাগছে ? আপনারা তো দূর্ণীতি মুক্ত।’’ জবাবে বললেন;
-‘‘ শালাদের এ সব তত্ব রাখ রফিক।’’ তাঁদের দেশে কাজ আছে ১০ জনের আবেদন করে নয় জন। সবাই চাকুরী পাই। নয় জনকে জিজ্ঞাসা করো নিয়োগে কোন দূর্ণীতি হয়েছে কি না ? সবাই বলবে, না। ওরা মানুষের অবাধ চলাচল বন্ধ করেছে। এটা দূর্ণীতি নয়। এটা মাপবে কে ?’’ বললাম;
-‘‘ বুঝলাম না।’’ সে বলে চললো;
আমদের দেশে পদ একটা। আবেদনকারী একলক্ষ। কোন দূর্ণীতি না হলেও একজন বলবে দূর্ণীতি হয়নি। বাকি সবাই দাবী করবে দূর্ণীতি হয়েছে।’’ অবাক হয়ে জানতে চাইলাম;
-‘‘ কেন বলবে।’’ জবাব দিলো;
-‘‘ তা না হলে বাবা মা কষ্ঠ পাবে। টাকা বন্ধ করে দিবে। কোন বেকার চাইবে তাঁর টাকা বন্ধ হোক। ’’
বুঝলাম কেন পরীক্ষা ভালো হলেও রেজাল্ট খারাপ হয়। সিভিল সোসাইটি এই দূর্ণীতির সূচক তৈরী করে ভালোই আছে। রাজনীতিতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য এই সূচকের অনমত্ম ব্যবহার চলবে। অবাক হই। অন্য দিকে পশ্চিমা বিশ্ব চাপ দিচ্ছে দূর্ণীতি কমাও।
-‘‘ কমাতে চাই। কেমন করে কমাবো। বলো।’’
‘দূর্ণীতি দমন কমিশন করো। জনগণকে তথ্য অধিকার দাও। তথ্য অধিকার আইন কর। তথ্য অধিকার আইন কার্যকর করা হলো। তথ্য কমিশন তার কার্যক্রম চালাচ্ছে। সকল পর্যায়ে তথ্য প্রদানের জন্য তথ্য কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁদের নাম ঠিকানা সেল নম্বর ওয়েবে দেয়া হয়েছে।
ক’দিন আগে একটি সেমিনার হয়ে গেল। সব মন্ত্রণালয়, বিভাগের সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন। সংগে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণও। একজন কর্মকর্তা জানতে চাইলেন,
-‘‘ দূর্ণীতির ধারণা সূচক দূর্ণীতির পরিমাপের সঠিক একক কি ?’’
প্রধান তথ্য কমিশনার দ্বিমত প্রকাশ করে বললেন, বিষয়টি তথ্য কমিশনের নয়। তথ্য কমিশনের কাজ মানুষের তথ্য পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা।
একজন সচিব জানতে চাইলেন।
-‘‘ আমরা জনগনের কাংখিত তথ্য দিতে পারছি কি ?’’
সবার এক জবাব,
-‘‘ না।’’
আমি মনে মনে বললাম আমরা যাই করি না কেন, তথ্য কমিশন দিয়ে দূর্ণীতি মুক্ত হবে বলে আমাদের মনে হয় না। আমাদের মেন্টাল গেটআপ সেটআপ পরিবর্তন করতে হবে। তা না হলে আমরা পশ্চিমাদের কাছে দূর্ণীতিগ্রস্থই থেকে যাবো।
সকল সরকারী অফিস ও প্রতিষ্ঠান তথ্য প্রদানে বাধ্য। তথ্য প্রদান করার জন্য মন্ত্রণালয় দপ্তর, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে তথ্য কর্মকর্তা নিয়োগ করে গেজেট নোটিফিকেশন জারী করা হয়েছে। সকল অফিস নাগরিক সনদ তৈরী করে জনগনের অবহিত করার জন্য অফিসের বাহিরে প্রদর্শন করছেন।
মন্ত্রণালয় গুলো তাদের ওয়েব সাইট চালু করেছে। জেলা পর্যায়ের তথ্য জনগণকে জানাতে জেলা তথ্য বাতায়ন খোলা হয়েছে। তথ্য সেবা নিশ্চিত করার করার জন্য প্রতিটি ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।
তথ্য বাতায়ন গুলোতে রয়েছে কতজনকে গত মাসে পর্চা দেয়া হয়েছে তার হিসাব। রশিদ চাচা আমার কাছে জানতে চাইলেন;
-‘‘ তোমার বেটিকে বুলনু, দেখতো বুবু হামার ঐ জমির নাম জারী হয়্যাছে কি না ? তোর বেটি কি বুললো?’’ এগল্যা নাকি এখ্যানে থাকে না। তাহিলে কি থাকে রে বাবা ?
জবাবে বললাম;
-‘‘ চাচা দেশের নয় কোটি মানুষের কাজ এই ভাবে দেয়া যায় না। এ মাসে কতটি নামজারী হয়েছে এ তথ্য দেয়া আছে।’’ রশিদ চাচা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালো;
-‘‘ এগল্যা দিয়া হামার কি লাভ হবে ?’’
রশিদ চাচাকে বুঝিয়ে লাভ হবে না। তাঁর কাছে তারটা ছাড়া আর কোন কিছুর কোন মানে হয় না। কোন জবাব দিচ্ছি না দেখে, চাচা আবার প্রশ্ন করলো;
-‘‘ তোরা খালি তোরঘে খবর দিবি। হ্যামারঘে খবর হামরা কুনঠে পাবো।’’
তাঁকে বুঝতে চেষ্টা করলাম। আমরা যে সকল তথ্য ওয়েবে দিয়ে থাকি তা হলো, আমরা যা জনগণকে জানাতে চাই। ওয়েব এর তথ্য গুলো সাপ্লাই ভিত্তিক। চাহিদা ভিত্তিক তথ্য কোন দিনই ওয়েব এ দেয়া যায় না। প্রতিটা মানুষের চাহিদা আলাদা, ইউনিক। চাহিদা ভিত্তিক তথ্য তৈরী করার জন্য চাহিদাপত্র দিতে হবে। তথ্য প্রক্রিয়াগত করা, তৈরী করার একটা খরচ আছে। খরচ দিয়ে সাধারণ মানুষ এই তথ্য নিতে চাইবে না। কিন্তু সিভিল সোসাইটি তথ্য গুলো চায়। ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় ‘সুজন’ চাইল প্রতিদ্বন্দী সকল প্রার্থীর কাছ থেকে সংগ্রহীত আটটি তথ্য। এ তথ্য জনসাধারণের কাছে সরবরাহ করতে হবে। প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীর সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। তথ্যের পরিমান প্রায় নয় হাজার পৃষ্ঠা। ‘সুজন’ প্রধানকে বললাম;
-‘‘ আপনার জনবল, অর্থবল দু'টোই আছে। দয়া করে রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে সংগ্রহ করে নিন।’’
সুজন নাছোড় বান্দা। তাঁরা কমিশন থেকেই তথ্য নিতে চায়। শেষ পর্যমত্ম অনেক চেষ্টা করে তথ্য দেয়া হলো। সুজনের অভিযোগ ,
-‘‘ প্রাপ্ত তথ্য পূর্ণাংগ নয়।’’
ঝগড়া করে লাভ নাই। জবাবে বললাম;
-‘‘ এর বেশী কিছু করার সাধ্য আমাদের নাই। এ দিয়ে চালিয়ে নেন।’’
সুজনের দাবী তথ্য গুলো প্রচার করা হলে জনগণ যোগ্য লোককে নির্বাচিত করবে। নির্বাচন কমিশন তথ্য গুলো প্রচার করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। ‘সুজন’ তথ্য নিয়ে প্রচার করেছে।
সরকার তথ্য দিচ্ছে। জনগণ তার তথ্য পাচ্ছে না। ‘সুজন’ তথ্য না পেয়ে অভিযোগ করছে। সবাই স্লোগান দিচ্ছে,
-‘‘ তথ্য চাই, তথ্য দিতে হবে। আমার জানার অধিকার আছে।’’
Md. Rafiqul Islam, PhD. | ||