বাঁশ গাছে ফুল ফুটেছে। না গাছে নয়, ঘাসে ফুল ফুটেছে। বাঁশ গাছ নয়, ঘাস। সব চেয়ে উঁচু ঘাস। ঘাসে প্রতিদিন ফুল ফোটে। পদ দলিত করি, এ আর এমন কি কথা! তবে হ্যাঁ, নজর কাড়ার কারণ আছে। বাঁশফুল কোনদিন নজরে আসেনি। আগ্রহটা তাই এত বেশী। বাঁশ বলে কথা। প্রতিদিন আমরা একে অপরকে বাঁশ দিচ্ছি। পদ দলিত করার কোন প্রশ্নই আসে না। এছাড়াও বাঁশের নানান ব্যবহার, ছনের ঘর তৈরী, জোয়াল, বাঁশের লাঠি, বেড়া দেয়া, জন্ম থেকেই দেখছি। তাই এত আগ্রহ। পঞ্চাশের দশকের মধ্যভাগে বাংলাদেশের উত্তর অংশের প্রত্যন্ত একটি গ্রামে জন্ম। প্রতিটি বাড়ির পাশে একটা বাঁশ ঝাড়। বলতে গেলে বাঁশ ঝাড়ের মাঝে জন্ম ও বেড়ে উঠা। বাঁশ ঝাড়ের পাশ দিয়ে, মাঝ দিয়ে প্রতিদিনের যাতায়াত। বাঁশ ফুল কোনদিন নজরে পড়েনি। কারণ এ বাঁশগুলোতে কোনদিন বাঁশ ফুল ফোটেনি। বাঁশের কোন দোষ নেই, দোষ আমাদের, বাঁশে ফুল ফোটার সুযোগ আমরা দেইনি। তার আগেই ছনের চালে খুঁটি বা ঘরের চালে বাতী হয়ে গেছে। বাঁশ ঝাড়ে জম্ম নিলেও বাঁশ ফুল দেখা হয়নি। বাঁশ ফুল আর ডুমুরের ফুল একই রকম বস' ছিল আমার কাছে। খবরটা পড়ে ভীষণ ইচ্ছা হলো বাঁশ ফুল দেখার। বয়স, যোগাযোগ, অথর্, স্বাধীনতা কোনটাই ছিল না। পাহাড়ে গিয়ে বাঁশ ফুল দেখা হয়নি। আজকে হলে, রঙ্গিন ছবি পত্রিকার পাতায় শোভা পেত। ইন্টারনেটে নতুন ব্লগ তৈরী ; বেসরকারী চ্যানেলগুলো বাঁশ, বাঁশ ফুল নিয়ে টক শো করতো। এরই মাঝে আমার বাঁশ ফুল দেখা হয়ে যেত। সেটাও ঐ সময় হওয়ার কোন উপায় ছিল না। তাই বাঁশ ফুল না দেখার বেদনা নিয়েই থাকলাম। কয়েক দিন বাঁশ ঝাড়ের পাশ দিয়ে যাওয়া আসার সময় মাথা উঁচু করে তাকালাম। বাঁশে ফুল এসেছে কি না। কদিন পর মনের অজানে- তাকানোও বন্ধ হলো। বাঁশ গাছের পাশ দিয়ে আসি যাই। কোনদিন মনে পড়েনি বাঁশ ফুলের কথা। বাঁশে ফুল ধরতে পারে এটা বিশ্বাসের মধ্যে ছিলো না। স্কুলে নাটক করবো, স্ট্রেজ তৈরী করতে বাঁশ কেটেছি, ব্যাডমিন্টন খেলবো বাঁশের খুটি পুতেছি। এভাবে জীবনের বেশীর ভাগ সময় পার করে ফেললাম। বাঁশফুল তো দূরের কথা বাঁশের অর্থনৈতিক গুরুত্ব নিয়েও কোনদিন ভাবিনি।