ঝাঁড়ফুঁক

Category: Religion Written by Md. Rafiqul Islam Hits: 9086

আমার আপনার বিশ্বাসে কিছু যায় আসে যায় না। আমাদের মত দেশে সর্বরোগনাসী একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি ও মহাঔষধ এই ঝাড়ফুঁক। কবে থেকে ঝাড়ফুঁকের শুরু আমার জানা নাই। তবে কোথা থেকে এলো তা ধারণা করতে পারি। মানুষের অসহায়ত্ব আর মৃত্যুহীন জীবনের প্রত্যাশা মানুষকে ঝাড়ফুঁকে বিশ্বাসী করছে। আমরা সবাই অসহায় আবার মরতেও চাই না। এই সব কিছুর মাঝে কিছু কিছু মানুষ সাময়িক হলেও অসহায়ত্ব জয় করতে পারে। মৃত্যুহীন জীবনের প্রত্যাশী হলেও জানে মরতে হবে। আসলে এরা সমাজের চালাক মানুষ। এরাই ঝাড়ফুঁকের প্রচলন করেছিল। ধারনা করা হয় অসহায়ত্ব চলে গেলে ঝাড়ফুঁকও বিদায় নিবে। আর্থিক অসহায়ত্ব কিছুটা বিদায় নিলেও আমরা আজও অসহায়। অমরত্বের আশা যে তো কোনদিন পূরণ হবে না। সমাজে চালাক মানুষ থাকবে। সাধারন মানুষের অসহায়ত্ব ও অমরত্ব প্রত্যাশা থাকবে। তাই ঝাড়ফূঁক আছে, ছিল, থাকবে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি হয়েছে। সাধারন অসুখে মানুষ তেমন অসহায়ত্ব বোধ করে না। মৃত্যুভয়ও তেমন প্রকট হয় না। আজকাল এমন রোগীদের ঝাড়ফুঁকের আশ্রয় নিতে দেখা যায় না। রোগীর অবস্থা শেষ পর্যায়ে চলে গেলে চলাফেরা বন্ধ, তখন ঝাড়ফুঁকই একমাত্র ভরসা। কবিরাজ বাসায় গেলে কবিরাজের গুরুত্ব থাকে না। বেশী রোগীকে সময় দেয়া যায় না। নিজের গুরুত্ব আয় রোজগারের কথা বিবেচনা করে এই চালাক মানুষগুলো তাঁদের ঝাড়ফুঁক চিকিৎসা পদ্ধতিতে অনেক নতুনত্ব এনেছেন। পানিপড়া, তেলপড়া, ফলপড়া, তাবিজ, কবজ, বান মারা, ভুত নামানো নানা কিসিমের নতুনত্ব দিয়ে চলছে ঝাড়ফুঁক চিকিৎসা। আপনারা একে ব্যবস্যা বলতে পারেন। আমার আপত্তি নাই। শিক্ষিত অনেক মানুষ ঝাড়ফুঁকের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষনা করেছেন। এতে ঝাড়ফুঁকের সংগে যুক্ত মহিলা কবিরাজ হিসাবে পরিচিত কিছু লোক এই চিকিৎসা হতে বিদায় নিলেও নতুন নতুন লোক এসে যোগ দিচ্ছেন। সর্বশেষ সংযোজন পাথর বিক্রেতা। দু’বোনের পর আমার বড় ভাই, তাঁর পর আমার জন্ম। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে দেখেছি তাঁর দু বাহুতে তাবিজ, গলায় মাদুলী, কোমরের কালো সুতার সংগে কি যেন বাধা। আমার গলা বাহুতে কোন কিছু কোন দিন উঠে নি। আমার বাবা-মা আমাকে নিয়ে অসহায় ছিলেন না। তাবিজ মাদুলীর পরও অসুখ বিসুখে আমরা দু’জনই আরশাদ ভাই এর দ্বারস্থ হতাম। ভিন্ন চিত্রও দেখেছি। সবদর মন্ডল, গোদাগাড়ীর বেশ স্বচ্ছল গেরস্থ। তাঁর বড় ছেলে ও ছোট মেয়ের অসুখ। টাইফয়েট এ আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছু দিন থেকে ভুগছে। সবদর মন্ডল বাবার বন্ধু। আমরা অসুস্থ হলে চাচা নিজেই দেখতে আসেন। বাবা বেঁচে থাকলে তিনি নিজেইযেতেন। তাঁর অবর্তমানে আমি গেলাম। সবদার মন্ডল জানালেন, “ছেলে আরশাদ কম্পাউন্ডারের কাছে গেছে ঔষধ আনতে”। বারান্দার একটা ঘাটে আয়েশা, মেয়ে বসে জ্বরে কাতরাচ্ছে। মন্ডল চাচাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আয়েশা যায়নি কেন’?
মন্ডল চাচার সাফ জবাব,
“ওর আবার ঔষধ কি? ছেলেটা গেছে ইয়াসিন মৌলভীর কাছে ওর জন্য পানিপড়া আনতে”।

কোন জবাব দেয়ার উপায় ছিল না। চুপচাপ বসে রইলাম। বুঝলাম সব কিছু সবার জন্য সবসময় এক হয় না। মানুষভেদে, সময়ভেদে, কিছু কিছু জিনিষ বদলে যায়। যেমন বদলে গেছে মন্ডল চাচার ছেলে ও মেয়েদের চিকিৎসা পদ্ধতি। কিছু দিন ভোগার পর দু’জনই সুস্থ হয়ে উঠলো। পানি পড়া আর আরশাদ চাচার পেনিসিল ইনজেকশনের কোন তফাৎ রইল না মন্ডল চাচার বাড়ীতে।

সাবেদ ভাই ভিটা ছাড়া তার তেমন কিছু নাই। এক ছেলে দুই মেয়ে। পরের জমি আধি করে কামলা দিয়ে সংসার চালায়। রোগ বালাই হলে সাবেদ ভাই ও ছেলে দৌড় দেন মোস্তফা হোমিওপ্যাথের কাছে। মেয়েদের কিছু হলে ঝাড়ফুঁক। ডাক পড়ে আইয়ুব বিশ্বাসকে। আইয়ুব বিশ্বাস কবিরাজ। তার উপর তাঁর কাছে ভুত আছে। কোন লোককে ভুতে ধরলে বিশ্বাস ভুত নামায়। নামানো ভুত দিয়ে ভুতে ধরা রোগীর ভুত তাড়ায়। সাবেদ আমাদের গ্রাম্য সর্ম্পকের ভাই। তাঁর বড় মেয়ে আমাদের বয়সী। লেখাপড়া করেনি, ফর্সা, মাঝারী গড়ন আকর্ষনীয় চ্যাহারা। বেশ সুন্দর। প্রাইমারীতে আমার সংগে কয়েকদিন স্কুলে গেছে। পড়াশুনা চালু রাখলে আমার সংগে নাইনে পড়তো। রাতে পড়ার সময় আমার বড় বোনকে দেখে অবাক হলাম। ঘরে ঢুকেই জানালো, শুনেছিস সাবেদ ভাই এর বড় মেয়েকে ভুতে ধরেছে।
‘তাই নাকি? এখন কেমন আছে?’ জিজ্ঞাসা করলাম।
‘ও সব জানিনা। শুনেছি আইয়ুব বিশ্বাস ঝাড়ফুঁক করছে। কাজ হচ্ছে না। আগামীকাল রাতে বিশ্বাস ভুত 
নামাবে। ভুত তাড়াতে না পারলে অসুখ ভালো হবে না’ বুবু জানালো।
‘এসব আমাকে বলার কারন কি?’ বুবুর কাছে জানতে চাইলাম।
জবাবে বুবু জানালো, ‘কাল রাতে আমি ভূত নামানো দেখতে যাবো। মা আমাকে একা যেতে দিবে না। তুই আমার সাথে যাবি’।
এবার বুঝলাম রাতে বুবুর আমার রুমে আসার উদ্দেশ্য। ভুত নামানো দেখার ইচ্ছা নিজেরও ছিল। তবুও জবাব দিলাম, ‘যাওয়া যাবে না। মা বকবে। পড়াশুনা নষ্ট হবে’।
‘একদিন পড়াশুনা না করলে কিচ্ছু হয় না ভাই। চল না তুই না গেলে আর কোন দিন ভুত নামানো দেখা হবে না’। বুবুর আকুতি আর অসহায়ত্ব দেখে আমার খারাপ লাগলো।
কোন জবাব দিচ্ছি না দেখে বুবু বললো, ‘গেলে একটা ভাল লজেন্স দিবে’।
‘ঘুষ লাগবে না। আমি যাবো। মাকে সামাল দিস’ - জবাব দিলাম।
বুবু লাফাতে লাফাতে রুম ছাড়লো। পরদিন রাতে বুবুকে নিয়ে সাবেদ ভাই এর বাড়ীতে হাজির হলাম। ঘরের মাঝে সাবেদ ভাই-এর মেয়ে শেফালী বসে আছে। আইয়ুব বিশ্বাস তাঁর সামনে বিড়বিড় করে মন্ত্র পড়ছে। হাতের কাছেই মোটা একগাছা নিমপাতা। মন্ত্র পড়া শেষ হওয়ার আগেই মাথা ঝাকানী দিয়ে শরীরকে মোচরাতে মোচরাতে ভুত নামালো। ভুত তাঁর নাম জানালো ‘আলকালা’ থাকে টংগী শহরে। টংগী থেকে এসেছে। বিশ্বাসের গলার স্বরের সংগে এখনকার স্বরের কোন মিল নাই। চোখগুলো রক্তের মত লাল, দানবের মত চ্যাহারা। হঠাৎ চিৎকার করে জিজ্ঞাসা করলো – ‘বল কি জন্য ডেকেছিস’। ঘর ভর্তি লোক ভয় পেয়ে পিছু হটলো।
সাবেদ ভাই বললো, “এই যে রোগী। তাঁকে তোমাদের লোকে ধরেছে। তাঁকে তাড়াতে আপনাকে ডেকেছি”।
জবাবে ভুত বললো, “সুন্দরী দেখলেই মাথা ঠিক থাকে না। ঘাড়ে চেপে বসিস। দেখছি তোঁকে”। বলেই লাফ
দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। হাতে নিমপাতার আঁটি। সমস্ত শক্তি দিয়ে ঝেঁড়ে যাচ্ছে। রোগীর মুখে কোন রা নাই।
কিছুক্ষন পর যন্ত্রনায় কিছু শব্দ করছে। বেচারার জন্য মায়া হলো। কিন্তু এই তান্ডব থামছে না।
বিশ্বাসের একমাত্র জিজ্ঞাসা,
‘তুই যাবি কি না বল?’
শেষ পর্যন্ত রোগী মুখ খুললো, ‘যাবো’
‘কখন যাবি’।
‘কাল সকালে’।
‘যাওয়ার আগে কি খেতে চাস’।
‘রসগোল্লা, দুধ আর কলা’।
সব দক্ষযজ্ঞ শেষ হলো। সকালে রসগোল্লা, দুধ, কলা, যোগাড় করা হলো। শেফালী একটা রসগোল্লা মুখে দিয়ে বমি করে দিলো। চারপাঁচ দিনপর স্কুল থেকে ফিরছি। সাবেদ ভাই এর বাড়ীর সামনে এসেই শুনি বুক ফাঁটা কাঁন্না। শেফালী সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে।

এ দৃশ্য আমি পরেও অনেক দেখেছি। রোগী গুলো সবাই গরীব। ভুত গুলো সবাই যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। সবাই যাওয়ার আগে রসগোল্লা খেতে চায়। বিষয়টা নিয়ে মাঝে মধ্যে ভাবতাম। একজন বললো, “ওরা সবাই গরীব মানুষ। রসগোল্লা ওদের জন্য সখের বস্তু। খেতে পায় না। তাই ভুতের সুবাদে যদি রসগোল্লা জোটে তা হলে মন্ধ কি?” তাই সবার রসগোল্লা খাওয়ার ইচ্ছে জাগে।

এর পর থেকে পুরো বিষয়টা ভন্ডামী মনে করতাম। ভুত তাড়ানোর কবিরাজগুলোর প্রতি ঘৃনা ছিল অনন্ত। দোটানাও কাজ করতো। কারন কোন কোন রোগী ঝাড়ফুঁকে ভালোও হচ্ছে। ভন্ডামী শূধূ ঝাড়ফুঁক ওয়ালারাই করে। এ ধারনা নিয়েই ছিলাম।

আমার বোনের বাচ্চা হলো। প্রসবকালে প্রচুর রক্তক্ষরণে এ্যানিমিয়া হয়ে গেল। আরশাদ ভাই, শামসুল হুদা ডাক্তারের পেনিসিলিন ইঞ্জেকশন, আয়রন টেবলেট কোন কাজে লাগলো না।

রওশন বুবুর স্বামী অর্ধশিক্ষিত মানুষ। এ্যালোপ্যাথিতে বিশ্বাসী নন। ঔষধ ডাক্তারের খরচ যোগাতে হয় না তাই এতোদিন কিছু বলেননি। এবার মুখ খুললেন,
‘একবার হোমিওপ্যাথিটা ট্রাই করে দেখ না, ভাই’।
‘ঠিক আছে’ - জবাব দিলাম।
পরেরদিন শাহজাহান মাস্টারের কাছে গেলাম। বুবু স্যারের ছাত্রী। তিনি নিজে এসে দেখে ঔষধ দিলেন। পনের দিনের কোর্স। রওশন বুবুর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেল। নজরুল ভাইয়ের বাবার পরামর্শে সারিবাদি সালসা দেয়া হলো। দু’চামচ দিলেই বুবু বমি করে দেয়। পাড়ার লোকেরা বলাবলি শুরু করলো ভুতে ধরেছে।
পরামর্শ দিলো ভুত তাড়ানোর। মা বললো, - “বাবা আইয়ুব বিশ্বাসকে একবার ডেকে দেখি”।

আমি প্রথমে তীব্র আপত্তি করলাম। সবার অনুরোধে শেষ পর্যন্ত অসহায়ের মত রাজি হলাম। দিন খন ঠিক হলো। সাবেদ ভাই এর বাড়ীর সেই দৃশ্য। বুবু বসে থাকতে পারছে না। তার পরেও তাঁকে জোর করে বসানো হলো।
- কবে যাবি বল ? বলতে বলতে বিশ্বাস বুবুকে নিম পাতার ঝাড় দিচ্ছেন। বুবুর মুখে রা নাই। বুবু ঢলে
পড়লো। সমস্ত যন্ত্রমন্ত্র বন্ধ হলো। সকালে আরশাদ ভাইকে ডাকলাম। আরশাদ ভাই বললেন,
- নাভী পাওয়া যাচ্ছে না।একটা কোরামিন দিলাম। দেখ কি হয়।’
কিছুই হলো না। রওশন বুবু আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। লাশ নিয়ে গোরস্তান গেলাম।

মোস্তফা ডাক্তার হোমিওপ্যাথ। গোদাগাড়ী ডাংপাড়ায় দোকান। আড্ডা মারতে যাওয়ার সুবাদে মোস্তফার দোকানে নিয়মিত যাওয়া। নানা লোক, নানা অসুখ, নানান ঔষধ থরে থরে তাকে তাকে সাজানো। এক তাকে তৈরী করা ঔষধ, অন্য তাকে সুগারের ছোট ছোট গোল বড়ি, আর সুগার পাউডার। একটা আলমিরাতে খুব যত্ন করে রাখা আছে টিনচার ঔষধ এবং রেক্টিফাইড স্পিরিট এর বোতল।

মোস্তফা ডাক্তার, তাঁর এ্যাসিসটেন্ট অবসর সময়ে ছোট ছোট বোতলে রেক্টিফাইড স্পিরিট, কোন টাই সুগার বড়ি গুলো ডুকিয়ে রাখে। রেক্টিফাইড স্পিরিট গুলোর ভিতর এক দু ফোটা টিনচার মেডিসিন তারপর দু’আংগুল দিয়ে বোতলগুলো ধরে অন্য হাতে বাড়ি দেন। বাড়ি দেয়ার সংখ্যা ভিন্নতা আমাকে অবাক করতো। একদিন মোস্তফাকে জিজ্ঞাসা করলাম।
‘টিনচার দিয়ে কোন কোটাতে বেশী বাড়ি, কোনটাতে কম বাড়ি দেন কেন?’
জবাবে বললেন, ‘ঔষধের পাওয়ার ঠিক করার জন্য’।
হোমিওপ্যাথি ঔষধের পাওয়ার ৩০ থেকে ১০ এম পর্যন্ত। টিনচারের পরিমান আর বাড়ি দিয়ে পাওয়ার ঠিক করা হয়।

বিষয়টি আনসাইনটিফিক মনে হলো। কথা বাড়ালাম না। বললাম, ‘চা খাওয়ান’।
একদিন মোস্তফার দোকানে বসে আছি। একজন রোগী এসে জানালো,
‘শরীর ম্যাজম্যাজ করছে। কোন কিছু ভালো লাগে না। ভালো করে একটা ঔষধ দেন’।
মোস্তফা ডাক্তার রেক্টিফাইড স্পিরিট থেকে সুগার বড়িতে কয়েক ফোটা দিয়ে তাঁর হাতে তুলে দিয়ে বললেন,
‘সকালে ৩ টা বড়ি, রাতে খাওয়ার পরে ৩টা বড়ি, ২ সপ্তার পরে আসবেন’।
রোগী হাসিমুখে ঔষধের দাম ১০ টাকা মোস্তফা ডাক্তারকে ধরিয়ে দিয়ে বিদায় নিলেন। কোন রোগী ছিল না। মোস্তফা ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করলাম,
‘এটা কি করলেন। এর মধ্যে তো কোন ঔষধ নাই’।
মোস্তফা ডাক্তার জবাব দিলেন,
‘আছে। ওটার নাম ফাইটাম। ওর কিছু হয়নি। তাঁকে ঔষধ না দিলে অসুস্থই থেকে যাবে’।
সে বললো, ‘কাউকে মনের বাঘে খায়, কারো বনের বাঘে। ওকে খেয়েছে মনের বাঘে। তাই ফাইটাম দিলাম।
তার মন থেকে মনের বাঘ তাড়াতে ফাইটাম লাগবে।’ কিছুই বলার ছিল না। মনে মনে বললাম, এখানেও ভন্ডামী। তা হলে পানি পড়ায় দোষ কি?

দেশে গেলে খালেকের ঔষধের দোকানে যাই। খলেক আমাদের সহপাঠী। লেখা পড়া শেষ করে চাকুরীর চেষ্টা শেষে ঔষধের দোকান দিয়েছে। সবদিক দিয়েও ভালো আছে, একটাই দুঃখ, কোন অফিস নাই। গ্রামের লোকের কাছে সে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স নয়। সে এখন ডাক্তার। ঈদের ছুটিতে বাড়ী গেছি। দেখা করতে তাঁর ঔষধের দোকানে গেলাম। চা না খাওয়ে ছাড়লো না। চায়ের জন্য অপেক্ষা করছি। একজন রোগী এসে জানালো, মুখে রুচি নাই। বল পাই না। জব্বর করে একটা ঔষধ দেন।

মালেক একটা খালি বোতল বাহির করে সামান্য স্পিরিট আর পানি ভরলো বোতলে, তার পর বাচ্চাদের ঔষধ রংগীন করার জন্য মিস্টি সিরাপ দিয়ে তার হাতে তুলে দিলো।
রোগী জানতে চাইলো, ‘দাম কত’?
‘৩০ টাকা’ খালেক জানালো।
রোগী ৩০ টাকা খালেকের হাতে তুলে দিয়ে রওনা দিলো।
চা খাচ্ছি। দোকানে আর কেউ নাই। খলেককে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘এটা তুমি কি করলা’।
‘কি করবো। ওর কোন অসুখ হয়নি। তাই ভাইটামিন দিয়ে দিলাম। আমি না দিলে অন্য আর একজন দিতো’।
চা শেষ করে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ী ফিরছি, আর ভাবছি এখানেও ভন্ডামী। কোথাও ঝাড়ফুঁক, কোথাও    ফাইটাম, কোথাও ভাইটামিন।
গল্পটা যখন বলছিলাম হার্ট স্পেশিয়ালিস্ট ডাঃ নজরুল ভাই এর কাছে তিনি বললেন,
ঔষধ অসুখ সারায় না। অসুখ সারায় মন ও শরীর। ঔষধ অসুখটা বাড়তে না পারে এ জন্য সাহায্য করে। ঝাড়ফুঁক, ফাইটাম, ভাইটামিন মনোবল বাড়িয়ে অসুখ থেকে রক্ষা করে। মনোবল বাড়ানোর জন্যই এসব দরকার। তোঁর অবশ্য এসবের দরকার নাই।
ঝাড়ফুঁক এর প্রয়োজনীয়তা নজরুল ভাইও মেনে নিয়েছেন। আমি আর কি বলবো।
অলৌকিকত্ব আর মানুষের অসহায়ত্ব থাকবেই। এটা থাকলে শান্তনা,ভন্ডামী, ব্যবস্যা এ সবও চলবে।