সরকারী চাকুরীতে নৈতিকতা ও অসদাচরণের প্রভাব। বিষয়টি সম্বন্ধে জানতে হলে কিছু Concept সম্বন্ধে ধারণার প্রয়োজন। ধারণা লাভের পর আমরা দেখার চেষ্টা করবো প্রভাব সম্বন্ধে। আজকের সরকারী চাকুরীতে নৈতিকতা ও অসদাচরণের প্রভাব সংক্রান্ত আলোচনার উদ্দেশ্যগুলো নিচে তুলে ধরা হলঃ
আলোচনার উদ্দেশ্য: (১) সরকারী চাকুরী কি? নৈতিকতা বলতে আমরা কি বুঝবো? অসদাচরণ কি? এর প্রভাব সংক্রান্ত বিষয়ে ধারণা প্রদান। (২) সরকারী চাকুরী নৈতিকতার সংগে সম্পর্ক। (৩) নৈতিকতার সংগে অসদাচরণের সম্পর্ক। (৪)সরকারী চাকুরীর উপর অসদাচরণের প্রভাব সংক্রান্ত বিষয়ে ধারণা প্রদান।
প্রাসংগিক সংজ্ঞাসমূহ
সরকারী চাকুরী: সরকারী চাকুরী বলতে আমরা বুঝবো "প্রজাতন্ত্রের সংযুক্ত তহবিল হতে অর্থের বিনিময়ে কৃতকর্ম।"
নৈতিকতা: নীতির অধীনে করণীয়কে আমরা বুঝি নৈতিকতা। আমার আমি হিসেবে আমার কিছু নীতি রয়েছে। আমি আবার পরিবারের আমি। আমার আমি হিসেবে অনেক কিছু করতে পারি। কিন্তু পরিবারের আমি হিসেবে আমি অনেক কিছু করতে পারি না।
সমাজের আমি হিসেবেও আমাকে অনেক কিছু করতে হয়। অনেক নীতি বন্ধনে আমরা সমাজের কাছে দায়বদ্ধ।
অন্যদিকে ধর্মীয় অনেক রীতি-নীতিও সমাজে কার্যকর রয়েছে। যার প্রভাব নৈতিকতার সংগে সম্পর্কিত।
এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের রাষ্ট্রের আমি হিসেবে আমরা আইন ও আচরণ দ্বারা আবদ্ধ। পরিবারের নৈতিকতা, সমাজের নৈতিকতা, ধর্মীয় নৈতিকতা মূলত অলিখিত স্বপ্রণোদিত বিধি-বিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কোন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নাই। বিধি-বিধানগুলো প্রয়োগ করার জন্য কোন প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়নি।
অসদাচরণ: অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক বা রাষ্ট্রীয় রীতি-নীতিগুলো লিখিত। প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্র নৈতিকতা বা আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে। এটা নিয়ন্ত্রণ করার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনাও রয়েছে।
রাষ্ট্র তার রাষ্ট্রের কাঠামোয় সংবিধান, আইন, বিধি দ্বারা কাজ, করণীয়, পদ্ধতি, রীতি-নীতি ইত্যাদির সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছে। রাষ্ট্রের সকল কর্মচারীকে এই কাঠামোর মধ্যে থেকেই সংবিধান, আইন, বিধির অধীনে থেকে তার কাজ সম্পাদন করতে হয়। এই কাঠামোর মধ্যে থেকে সংবিধান আইন, বিধি, নীতি বহির্ভূত যেকোন কাজ আচরণ পরিপন্থি যা অসদাচরণ হিসেবে পরিচিত।
আচরণগত সীমারেখা: সংবিধান রাষ্ট্রের সকল নাগরিককে মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেছে। মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকার প্রতিষ্ঠানও আইন প্রণয়ন করেছেন। এই আইন প্রয়োগ হতে সরকারী কর্মচারী বিরত থাকলে ব্যক্তি স্বার্থ, প্রলোভন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হলে মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা যায় না। সরকারী কর্মচারীকে অসদাচরণ হতে বিরত রাখার জন্য সরকার বেশ কিছু বিধান প্রয়োগ করে থাকেন। যেমন,
(১) সরকারী কর্মচারী (শৃংখলা ও আপীল) বিধিমালা
(২) সরকারী কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা
এছাড়াও অনেক প্রতিষ্ঠানের রয়েছে বিশেষ বিশেষ সরকারী কর্মচারী বিশেষ বিধান। এত সমস্ত বিধি-বিধানের বেড়াজাল ডিঙ্গিয়েও অসদাচরণের ঘটনা ঘটছে। এ সমস্ত ঘটনার হাত হতে অব্যাহতি পেতে হলে শুধু আইনের উপর নির্ভর করে বসে থাকলে চলবে না।
অসদাচরণের প্রভাব:
অসদাচরণের প্রভাব নানাবিধ। যেমন,
(১) দুর্নীতি
(২) স্বজনপ্রীতি
এ সকল থেকেই জন্ম হয়, অদক্ষতা, অযোগ্যতার। যা দেশ জাতিকে পিছনে ঠেলে দেয়। নিয়ে যায় অন্ধকারে।
শেষ কথা: আমার আমি অন্তরের কাছে, পরিবারের কাছে, ধর্মের কাছে, সমাজের কাছে দায়বদ্ধ হলে, শৃংখলা ও আচরণ বিধিমালা Code of Conduct ইত্যাদির তেমন প্রয়োজন হবে না।