গণতন্ত্র ও সু-শাসন: দিল্লী কা লাড্ডু

Category: Governmental Written by Md. Rafiqul Islam Hits: 6460

অফিসে কাজের ফাঁকে ফাঁকে এক পেয়ালা চা, ইদানিং কালে কফিও যোগ হয়েছে। আলাপের সাথে অফিসের কাজ সেরে নি। এ সময় ছোট খাটো আড্ডা জমে উঠে। এমনি একটা আড্ডা চলছিল। সুসেন, যুগ্ম-সচিব হাই-টেক পার্কের এমডি কয়েক দিন পর চীন যাবেন; এসিএডি কোর্সের অংশ হিসেবে আগেও চীন ঘুরে এসেছেন। তথ্য প্রযুক্তিতে চীনের বিস্ময়কর উন্নয়ন সুসেন দেখে এসেছেন। সে অবাক হয়ে বললো;
‘‘- আমরা গণতন্ত্র গণতন্ত্র করছি স্যার। গণতন্ত্রের জন্য বাসুনিয়ারা জীবন দিচ্ছে। দেশ কি পেলো। সেই তো যেখানে ছিলাম সেখানেই রয়ে যাচিছ। চীন গণতন্ত্র ছাড়াই আজ কোথায় ?’’
‘‘- কি বলতে চান, সেটা বলেন।’’ জানতে চাইলাম। জবাবে সে বললো;
‘‘- গণচীনে দেখলাম সমাজতন্ত্রের মধ্যেই তাঁরা গভীর সমুদ্রে পোর্ট, তথ্য প্রযুক্তিতে বিস্ময়কর সাফল্য, গণতান্ত্রিক আমেরিকাকে নীচে ফেলে চীন আজ বিশ্বের এক নম্বর অর্থনৈতিক শক্তি হয়েছে।’’ জবাবে বললাম;
‘‘- চীন ১০০ কোটির উপরের মানুষের একটা দেশ। আয়তনেও ছোট না। আমেরিকায় ৩০ কোটি লোক। অর্থনৈতিক শক্তি চীন হবে। এটাই তো স্বাভাবিক। অর্থনৈতিক ভাবে যাই হোক, তিয়ানআনমেন স্কয়ারে শত শত লাশের কথা আপনি ভুলে যাচ্ছেন কেন?’’ জবাবে সুসেন জানালো;
‘‘- চীনের এত উন্নতির পরও তাঁরা কেন এসব করে? বুঝি না স্যার।’’ জবাবে বললাম;
‘‘- সুসেন আমিও বুঝি না। তবে একটা জবাবটা আমার জানা আছে।’’ সুসেন অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো;
‘‘- স্যার। জানেন না, তারপরও উত্তরটা জানা আছে। এটা কেমন কথা।’’ সুসেন অবাক হলে,
‘‘- কারণ মানুষের স্বভাব। ‘নদীর এ কুল বলে ছাড়িয়া দীর্ঘশ্বাস, ওকুলে যত সুখ আমার বিশ্বাস- Grasses are always green on the otherside.” সুসেনকে জবাব দিলাম;
‘‘- বুঝলাম না স্যার।’’ সুসেন জবাব দিলো।
‘‘- না বুঝার কিছু নাই। যার যেটা নাই, সে সেটা চায়। তোমার উন্নয়ন নাই, পরিবর্তন নাই, পরিবর্তন চাচ্ছো, চীনে গণতন্ত্র নাই, তবো গণতন্ত্র চাচ্ছে।’’ জবাব দিলাম;
‘‘- সুসেন মাঝে ঢুকে জানতে চাইলো;
‘‘- আর ইউরোপ আমেরিকা।’’
বললাম;
‘‘- ষোড়শ শতাব্দির দিকে ইউরোপে গণতন্ত্র ও উন্নয়ন দুটোই ছিল। হলে কি হবে; শ্রমজীবিরা এ উন্নয়নের সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। শ্রমজীবি মানুষ এক হলো। তাঁরা জানতো তাঁরাই সংখ্যা গরিষ্ঠ। তারা ক্ষমতা দখল করতে পারে। লেলিনের নেতৃত্বে সেখানকার শ্রমজীবি মানুষ অক্টোবর বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে প্রলেতারিয়েত শাসন প্রতিষ্ঠা করলো।’’
সাঈদ জানতে চাইলো;
‘‘- সোভিয়েত ইউনিয়ন ৭ই নভেম্বর তাদের বিপ্লব দিবস পালন করে।’’ তা হলে এটার নাম অক্টোবর বিপ্লব কেন?
‘‘- গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার যাকে আমরা ইংরেজী বলে জানি তা সংশোধন করা হয়েছে কয়েকবার। তাই অক্টোবর ২৪, নভেম্বরের ৭ তারিখ হয়ে গেছে।’’
‘‘- এটা ভেঙ্গে পড়লো কেন স্যার?’’ বিল্লাল জানতে চাইলো;
‘‘- শ্রমিক কাজ করেছে; খেয়েছে। কখনও সরকার চালায়নি। পণ্যকে বাজারজাত করতে না পারলে শিল্প চলবে না। শিল্প না চললে সমাজতন্ত্র টিকে থাকবে কি করে?’’
‘‘- বুঝলাম না স্যার।’’ একজন কনিষ্ঠ সহকর্মী মন্তব্য করলো। জবাব দিলাম;
‘‘- কয়েকদিন আগে বাঘাবাড়িতে একটা ঘটনা ঘটেছে; জানো?’’ জানতে চাইলাম। কর্মকর্তারা মমত্মব্য করলেন,
‘‘- কোন ঘটনার কথা বলছেন স্যার? বুঝছি না! স্যার?’’
‘‘- বাঘাবাড়িতে খামারীরা রাস্তায় দুধ ফেলে দিচ্ছে। এ খরবগুলো পত্রিকার পাতায় আপনারা দেখেছেন।’’
‘‘- রংপুরে গরুকে বেগুন খাওয়ানো হচ্ছে।’’
‘‘- লাউ রাস্তায় ফেলে দিয়ে কৃষক মাথায় হাত দিয়ে রাস্তায় বসে আছেন।’’
‘‘- এগুলো খবর হয় যখন সম্পদ, সম্পদ সম্পদ থাকে না। অথবা এগুলো অতি মূল্যবান সম্পদ হয়ে যায়।’’
‘‘- খুব জটিল মনে হচ্ছে!’’ কে একজন মন্তব্য করলো।
‘‘- পূর্ব ইউরোপে শ্রমজীবি মানুষের শাসন, পশ্চিম ইউরোপকে সতর্ক করে দিলো‘। তাঁরা শুধু মূলধন ভিত্তিক চিন্তা বাদ দিয়ে মানুষকে নিয়ে ভাবতে শুরু করলো। পশ্চিমা বিশ্ব এখন বেনোভোলেন্ট রাষ্ট্র। ভালোই চলছিল। প্রযুক্তি ও বিশ্বায়ন সব কিছু ওলোট পালট করে দিল। এখন ক্ষমতা কর্পোরেট ব্যবস্থার হাতের মুঠোয়।
সম্পদ বানাতে বাজার দরকার। পশ্চিমা বিশ্ব তাঁদের বাজার পূর্ব ইউরোপের জন্য বন্ধ করে দিলো। শ্রমিকের মাথায় পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধির কোন পরিকল্পনা ছিল না। তাঁরা যা আয় করেছে ভাগাভাগি করে সুখে থেকেছে। পরে কারখানার নবায়ন, উন্নয়ন, সম্প্রসারণে পুজির প্রয়োজন হবে; এটা মাথায় ছিল না। কালের পরিকল্পনায় কলকারখানা জরাজির্ণ হতে হতে ভেংগে পড়লো। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা এসতনিয়া দিয়ে ভেঙ্গে পড়া শুরু হলো। সমাজতন্ত্রের জনক খোদ রাশিয়া দিয়ে তার সমাপ্তি ঘটলো। চীন অনেক আগেই সতর্ক হয়েছিল। আরও সতর্ক হলো। তার বিশাল বাজার বিশ্বের জন্য খুঁলে দিলো। বিশ্বও চীনকে তাদের বাজার খুলে দিয়েছে।
‘‘- এ পরও তিয়ানমেন কেন?’’ মোর্শেদ জানতে চাইলো। জবাবে বললাম;
‘‘- আব্রাহাম লিংকন এর গণতন্ত্রের সংজ্ঞা। গণতন্ত্রের সংজ্ঞা স্বপ্ন দেখায়। স্বপ্নপূরণ হয় না। তাই ঝামেলা বাঁধে।’’ একজন জানতে চাইলো;
‘‘- সংজ্ঞায় স্বপ্ন, এটা কেমন কথা স্যার?’’ জবাবে বললাম সংজ্ঞাটা দেখ,
‘‘- Government of the people, by the people, for the people’ সংজ্ঞাটা মানুষকে স্বপ্ন দেখায়, তাঁরা সরকার হবে, তারা সরকার নির্বাচন করবে, নির্বাচিত সরকারটা তাঁদের জন্য কাজ করবে। স্বপ্নগুলো পুরণ হয় না। স্বপ্নভঙ্গের ঘটনা ঘটে।
‘‘- জনগণের মধ্য হতে জনগণের দ্বারা ও জনগণের জন্য সরকারই গণতান্ত্রিক সরকার।’’ জবাবটা শুনে বিল্লাল মুচকি হেঁসে বললো;
‘‘- স্যার গণতন্ত্রের সংজ্ঞা এখন আর ওরকম নাই। সংজ্ঞাটা এখন পরিবর্তন হয়েছ।’’
‘‘- Government off the people, buy the people, far from the people.‘‘
‘‘- জনগণকে বাদ দিয়ে; জনগণের মতামত কিনে; জনগণের থেকে দূরের সরকারই গণতান্ত্রিক সরকার।’’ জবাবে বললাম;
‘‘- শুধু তোমার ক্ষোভ নয়। করপোরেট গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে সারা বিশ্ব সোচ্চার। জার্মানির সেই সুন্দর মেয়েটার মুখে ইউরো সাটানো ছবিটা দেখছো?’’ জবাবে সবাই এক সংগে বললো;
‘‘- জী স্যার।’’ সহকারী প্রোগ্রামার মৌসুমী জিজ্ঞসা করলো;
‘‘- তা হলে সমাজতন্ত্রের পতন ঘটলো কেন স্যার? ’’
মখাইল গরভাচেভ ‘গ্লাসনস্ত’-বাকস্বাধীনতা’ এর ‘পেরেসত্রয়কা’-‘পুণর্গঠন’ কার্যক্রম হাতে নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভংগুর অর্থনীতিকে রক্ষার চেষ্টা করেছিলেন। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি। লাভ হলো গণচীনের। সময় পেয়ে নতুন প্রযুক্তি জ্ঞানের জন্য বাজার মুক্ত করে দিলো। চীনের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। এক অংক থেকে দু অংকে। ‘ওভার হিটেড’ অর্থনীতি দিয়ে সকল অর্থনীতিবীদরা সংকিত। গণচীনের ভয়ের কোন কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। এই তাপ সমানভাবে ভাগ হচ্ছে। অন্যদিকে সমাজতন্ত্রের কবর হয়ে গেছে মনে করে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নোরাল্ড রিগান তৃপ্তির ঢেকুর তুলে বললেন;
‘‘- সমাজতন্ত্রের মৃত্যু হয়েছে। কোল্ড ওয়ারের আর প্রয়োজন নাই। আমাদের এখন ‘‘New World Order নিয়ে ভাবতে হবে।’’
ডেভিড অসবরণ এর নেতৃত্বে এক দল বাঘা বাঘা অর্থনীতিবীদ প্রেসিডেন্ট রিগানের পাশে দাঁড়ালো। পরবর্তীতে তাঁরা প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের চালিকা শক্তিতেও পরিণত হলেন। “New Public Management” এর যুগ শুরু হলো। নতুন ব্যবস্থাপনা বলতে;
‘বাজার নতুন ব্যবস্থাপনার মূল ভিত্তি। এখানে রাষ্ট্রের তেমন কিছু করার নাই। রাষ্ট্র সহযোগীতা করবে মাত্র।’অন্য এক দল আরও এক ধাপ এগিয়ে বলতে শুরু করলেন। বাজার ঠিকমত কাজ করলে রাষ্ট্রেরই কোন প্রয়োজন নাই। ভুতের মুখে রামনাম। বুলগেরিয়ায় লেখাপড়া করার সময় শুনেছিলাম;
‘‘- কমিউনিজম আসলে রাষ্ট্রের প্রয়োজন হবে না।’’
‘‘- নতুন ব্যবস্থাপনায় ধনতন্ত্রও একই কথা বলছে। এটা কি সম্ভব?’’
তফাৎটা কোথায় বুঝতে পারছিলাম না। কমিউনিজমে রাষ্ট্রের প্রয়োজন হয় না। বাজার ঠিকমত কাজ করলে রাষ্ট্রের প্রয়োজন হয়না। দূর্ভাগ্য সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজম হল না; বাজার ঠিকমত কাজ করে না। রাষ্ট্রের প্রয়োজন; ফুরায় না। রাষ্ট্র থেকে যায়। তাই রাষ্ট্র আছে। ভবিষ্যতে কি হবে জানি না।
তৃতীয় বিশ্বের কিছু স্বনামধন্য অর্থনীতিবীদ পশ্চিমা বিশ্বে বাস করছেন। তাঁদের অনেকে স্বনামধন্য। বাংলার অমর্ত্য সেনের মত অনেকে অর্থনীতি শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কারও পেয়েছে। তাঁদের নিজ দেশ উন্নয়ন বঞ্চিত। তাঁরা রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তাটা চরমভাবে উপলব্ধি করেন। তাঁরা চিৎকার শুরু করলেন।
‘‘- রাষ্ট্র ফেল করে; বাজারও ফেল মারে। রাষ্ট্র ফেল করলে বিকল্প ব্যবস্থা জন্ম নেয়। বাজার ফেল করলে কি হবে?’’
নিউ পাবলিক ম্যানেজমেন্ট কোন জোরালো যুক্তি দাঁড় করাতে পারছে না। যুদ্ধ তৃতীয় বিশ্বের বিজ্ঞানীদের পায়ের নিচের মাটি শক্ত হচ্ছে। গলার আওয়াজ জোরদার হচ্ছে, বাজার পাবলিক পণ্য, সেবা তৈরী করবে না। সরকারকেই এই পণ্য তৈরী করতে হবে। দেশে শিশু আছে, প্রতিবন্ধী আছে, বয়স্ক লোকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এদের দেখা শোনা করবে কে?। এদের জন্য বাজার কোন কিছু করবে না। কোন জবাব নাই।
‘‘- এ্যাংরী ইকোনোমিস্টদের’ চিৎকারে ডৈভিট অসবরণ বা পিছু হঠলো। নতুন করে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা শুরু হলো।’’
আমার এক বন্ধু লেখাপড়া নিয়ে থাকে। একদিন সে জিজ্ঞাসা করলো;
‘‘- আচ্ছা পন্ডিত বলতো, গণতন্ত্র, ধনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এসব নিয়ে এরা কেন এত বাড়াবাড়ি করে বলতে পারিস?’’
হাঁসতে হাঁসতে তাঁর কথার জবাব দেয়ার আগে বললাম;
‘‘- প্রথমত আমি পন্ডিত নই। তোর এই কথা প্রত্যাহার কর। জবাবে সে বললো;
‘‘- আচ্ছা করলাম। এখন বল, মানুষ এ সব নিয়ে মতামাতি করে কেন? তুই তৃতীয় বিশ্বের গণতন্ত্র দেখেছিস। সমাজতন্ত্রের মধ্যে বসবাস করেছিস। আধুনিক গণতন্ত্রের সুতিকাগার বৃটেনে বছরের পর বছর কাটিয়েছিস। তুই ছাড়া এর সঠিক জবাব কার কাছে পাবো বল।’’
জবাবে বন্ধুকে শান্তনা দিলাম;
‘‘- তোর প্রত্যাশা অনেক। এ সব জায়গায় থেকেছি, এটা ঠিক। আমার এতো জ্ঞান নাই।’’
বন্ধুটা আমার প্যাচাল শুনে বললো;
‘‘- সব শুনলাম। এবার তোর মতামত টা দে।’’ নতুন প্যাচাল শুরু করলে আরো ক্ষেপে যাবে। তাই কথা না বাড়িয়ে জবাব দিলাম;
‘‘- গণতন্ত্রের প্রবক্তারা বলেছেন, গণতন্ত্রে মানুষ নিজেকে নিজে শাসন করার সুযোগ পাবে। উন্নয়ন হবে, দুর্নীতি কমবে, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই তারা গণতন্ত্র চাই।’’ জবাবে বন্ধুটা বললো;
‘‘- গণতন্ত্রের পক্ষে যুক্তি বুঝলাম। তা হলে কিছু লোক কেন সমাজতন্ত্র চায়। সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে যেখানে গণতন্ত্র বিদায় নিয়েছে সেখানে উত্তর কোরিয়া, কিউবার ফিদেল কাস্ত্রো ক্যানস্যার নিয়েও আজও কেন সমাজতন্ত্রের গুণগান গাচ্ছে।’’ জবাবে বললাম;
‘‘- পঞ্চাশ ষাটের দশকে রাজপথের মিছিলের স্লোগান গুলো মনে আছে?’’ আমার বন্ধু কি যেন ভাবছিল। উপস্থিত শ্রোতা আমার পিএস সাঈদ জবাব দিল;
‘‘- তখন আমাদের জন্মই হয়নি স্যার।’’ জবাবে বললাম;
‘‘- সক্রেটিস এর আমলে আমারও জন্ম হয়নি, এটা ঠিক। তবে ইতিহাস আমাদের সে আমলে নিয়ে যেতে পারে।’’
ইতিহাস আছে তাই আমরা কপারনিকাস এর আমলে পোল্যান্ডে জন্ম নিতে পারি। ইতিহাসের চোখ দিয়ে দেখতে পারি, শুনতে পারি, মৃত্যুকে সামনে রেখে তিনি বলছেন, ‘তবুও আমি বলবো, পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে।
‘‘- ব্যাটা পন্ডিত! তোর সঙ্গে প্যাচাল পেড়ে লাভ নাই। আমি চললাম।’’ বন্ধুর এই জবাবে খুশি হলাম;
‘‘- যাক! তার হাত থেকে বাঁচা গেল।’’ সাঈদ জানতে চাইলো,
‘‘- স্যার পঞ্চাসের দশকে রাজপথ কাপানো স্লোগান গুলো কি ছিলো।’’ জবাবে বললাম;
‘‘- এ সব তোমাদের জেনে আজ কি লাভ? আজ কাল এই গ্লোগান আর শোনা যায় না।’’ জবাবে সে জানালো;
‘‘- জানা তো হবে স্যার।’’ সাঈদ মন্তব্য করলো। জবাবে বললাম;
‘‘- শুনতে চাও।’’ সে হ্যাঁ সুচক জবাব দিলো।
‘‘- অন্ন চাই, বস্ত্র চাই, শিক্ষা চাই, বাঁচার মত বাঁচতে চাই।’’
‘‘- মরতে হলে মরবো; ক্ষুধার সঙ্গে লড়বো।’’
এ শ্লোগানে আর কেউ সাড়া দেয় না। আজ ক্ষুধার যন্ত্রনা তেমন নাই।
‘‘- আমরা মাসলোভের চাহিদার সোপানের উপরের ধাপে উঠে গেছি।’’ বিল্লাল বললো;
‘‘- এর মানে।’’ কে যে প্রশ্ন করলো। জবাবে বললাম;
‘‘- মানে অতি সহজ। আমার টাকা আছে। টাকা চাই না। আমি আমার কথা বলার স্বাধীনতা চাই। করপোরেট গণতন্ত্র ইউরো দিয়ে জার্মানীর ঐ সুন্দর মেয়েটার মুখ বন্ধ করেছে। তাই সে মুখে ইউরো সাটিয়ে প্রতিবাদ করছে। বলছে;
‘‘- আমাকে কথা বলার অধিকার দাও।’’
মৌসুমী জানতে চাইলো;
‘‘- তা হলে গণতন্ত্র কি?’’ তার প্রশ্নটা শুনে হাঁসছিলাম।
‘‘- সে জানতে চাইলো, -‘‘হাঁসছেন কেন স্যার?’’ জবাবে বললাম;
‘‘- হাসছি, কারণ আমিও জানি না গণতন্ত্র কি?’’ একজন রাষ্ট্র বিজ্ঞানীকে জিজ্ঞসা করো ও বলবে,
‘‘- গণতন্ত্র হলো সমাজতন্ত্রের ঠিক উল্টোটা।’’
‘‘- গণতন্ত্র মানে এক নায়কতন্ত্র নয়।’’
‘‘- গণতন্ত্র মানে ধর্মীয় কোন শাসন নয়। জনগনের শাসন।’’ জবাবে বললো;
‘‘- বুঝলাম। আসলে গণতন্ত্র কি। গণতন্ত্র কি সুশাসন এনে দিবে?’’ জবাবে উনি বলবেন;
দেখুন গণতন্ত্র তো অনেক ধরনের যেমন ধরুন,আমেরিকার রাষ্ট্রপতি শাসিত গণতন্ত্র, ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ও সংসদের মধ্যে ক্ষমতার ভাগাভাগির গণতন্ত্র, বৃটেনের রাণী ও জন প্রতিনিধিদের পাঁচমিশালী গণতন্ত্র; সুইজারল্যান্ডের সরাসরি গণতন্ত্র; আরো কত গণতন্ত্রের কথা শুনি। নাইবা বললাম লিবিয়ার ইসলামের সংগে গাদ্দাফির গণতন্ত্রের কথা।
জবাবে বলবেন;
‘‘- এত প্যাচাল পাড়ছেন কেন? আমার প্রশেণর সোজাসুজি জবাব দিলেই পারেন।’’
‘‘- দেখুন আধুনিক গণতন্ত্রের জনক বৃটেনও সত্যিকারের গণতন্ত্রে আস্থা রাখতে পারেনি। তাই জনপ্রতিনিধিদের উপরে ভারসাম্যের জন্য রাণীকে রেখে দিয়েছেন।’’ জবাবে বললাম;
‘‘- হ্যঁা ঠিক। পৃথিবীর শেষ দিন পাঁচ রাণীই থাকবেন।’’
জবাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলবেন;
‘‘- একজনকে তো চিনলাম, আর চারজন কে? চিনলাম না।’’ মুচকি হেঁসে জবাব দিলাম;
‘‘- ইসকাফন, হরতন, রুহিতন আর চিড়িয়ার রাণী।’’ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হোঁ হোঁ করে হেসে উঠলেন।
আমি বললাম;
‘‘- আপনার প্রশ্নের জবাব দিয়েছি। এবার আমার প্রশ্নের জবাব দিন।’’ উনি হাসতে হাসতে জবাব দিলেন;
‘‘- গণতন্ত্র সুশাসন, এনে দিবে কি না; কি করে বলবো বলুন? বিশ্ব মন্দা পশ্চিমাবিশ্বকে অর্থনৈতিক দিক থেকে কাঁহিল করে দিয়েছে। গণতন্ত্রের জন্মভূমি গ্রীসের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। জনগণ বিদ্রোহ করছে। মানুষ ঘরবাড়ী অফিস আদালত ছেড়ে রাস্তায় বিক্ষোভে ফেঁটে পড়েছে। শ্লোগান দিচ্ছে।’’
একজন বললো;
‘‘- ইউরোপীয় ইউনিয়ন গ্রীসকে উদ্ধার করার জন্য অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়েছে। একটা কিছু করবে। বাংলাদেশের কি হবে বলুন।’’ জবাবে তিনি বললেন;
‘‘- কে আর্থিক সাহায্য করবে? ওয়ালস্ট্রিট এর বিক্ষভে সারা পশ্চিমা বিশ্ব আতংকগ্রস্থ। কে বাঁচাবে?’’
‘‘- এ নিয়ে আমাদের মাথা না ঘামালেও চলবে। এটা পশ্চিমাদের সমস্যা। তারাই সমাধান করুক। অধ্যাপকের সাফ জবাব। বিল্লাল জানতে চাইলো,
‘‘- তিয়ানমেন স্কয়ারে চীনারা বিক্ষোভ করছে, গণতন্ত্রের জন্য; মিশর, লিবিয়া ও তিউনিশিয়ার জনগণ আন্দোলন করছে এক নায়কতন্ত্রের পতনের জন্য। পশ্চিমারা বিক্ষুব্ধ অর্থনীতির বেহাল দশার জন্য। কেন এসব হচ্ছে?‘‘
‘‘- যার যেটা নাই, সে ওটা নিয়ে মাথা ঘামাবে। এটাই তো স্বাভাবিক।’’ অধ্যাপক মন্তব্য করলেন। মন্তব্য শুনে সবাই একসঙ্গে জানতে চাইলো;
‘‘- তাহলে সুশাসনের জন্য গণতন্ত্র কি কার্যকর নয়?’’ জবাবে তিনি জানালেন,
‘‘- দিল্লী কা লাড্ডু, খেতে চাইলে খাবেন।’’