ডকুমেন্ট তৈরীর ধারণা, কৌশল, পদ্ধতি

Category: Education Written by Md. Rafiqul Islam Hits: 18714

আমি একটা পাঞ্জাবী কিনতে চাই। পকেটে টাকা আছে। একটা দোকানে গেলাম, দেখলাম, পছন্দ হলে কিনে নিয়ে চলে আসলাম। ব্যাস! আর কোন ঝামেলা নাই।

সরকারের ক্ষেত্রে বিষয়টা এত সহজ নয়। চাইলেই সরকার সবকাজ করতে পারে না। সরকারকে প্রতিটি ক্ষেত্রে জবাবদিহি করতে হয়। সরকার পাঞ্জাবী কিনতে চাইলে তাকে অবশ্যই জানাতে হবে, কেন পাঞ্জাবী? কেন জামা নয়? পাঞ্জাবী কেনার সিদ্ধান্ত নিলে প্রশ্ন উঠবে কোথা হতে অর্থের সংস্থান হবে। কাপড়, রং, পকেট সংখ্যা, কলার সব কিছুই নির্ধারিত হতে হবে। তা না হলে সরকার কোন কাজ করতে পারে না। এ সব কিছু করার জন্য সরকারকে অনেক ডকুমেন্ট তৈরী করতে হয়। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট তৈরী করা ছাড়া সরকার এক পাও আগাতে পারে না।

সরকারের সব দপ্তর এক কাজ করে না। আবার একই মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, অধিদপ্তর, উইং অধিশাখা, শাখা, কার্যালয়গুলোর একই ধরণের ডকুমেন্টশন তৈরীর করার প্রয়োজন পড়বে না। তবে কিছু কাজ সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, অধিদপ্তরকে করতে হয়। ফলে কিছু কাজের জন্য সকল দপ্তরকে এক ও অভিন্ন ডকুমেন্ট প্রণয়ন করতে হতে পারে।

সাংবিধানিক সকল প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের কাজের পরিধি বাংলাদেশের সংবিধান দ্বারা নির্ধারিত। কাজগুলো কি হবে? কে কাজগুলো করবে? সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া কি হবে? এ সকল বিষয় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সংবিধানে, আইনে এবং সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদ বলে প্রণীত রুলস অব বিজনেস দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রণালয, বিভাগ, দপ্তর, অধিদপ্তর সমূহের কাজ-কর্ম কিভাবে পরিচালিত হবে এ বিষয়ে রয়েছে নির্দেশিকা, নীতিমালা, আইন, বিধি, ম্যানুয়েল পরিপত্র ইত্যাদি। স্বায়িতশাসিত প্রতিষ্ঠান, আধা-সরকারী সংস্থাগুলো আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। এ সকল আইনের মধ্যেই সংস্থার কার্যক্রমের পরিধি, পরিচালনার রীতি-নীতি, ইত্যাদি উল্লেখ থাকে। এছাড়াও সংস্থাকে প্রদত্ত ক্ষমতা বলে সংস্থাও অনেক বিধি বিধান প্রণয়ন করে। এগুলোই মূল ডকুমেন্ট। এই মূল ডকুমেন্ট এর উপর ভিত্তি করে কাজের ধরণ ভেদে বিভিন্ন দলিল দস্তাবেজ সব ধরণের প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত প্রণয়ন করে।

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কাজ মূলত তিন ধরণের:

(১) ম্যানডেটেড কাজ;

(২) প্রোগ্রামভুক্ত কাজ; এবং

(৩) বিশেষ ধরণের প্রকল্পভুক্ত কাজ।

প্রতিটি কাজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ধরণের ডকুমেন্টশন প্রয়োজন হয়। মূল ডকুমেন্ট-এর চাহিদার ভিত্তিতেই পরবর্তীতে অন্য সকল ডকুমেন্ট প্রণীত হয়ে থাকে। তবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের রয়েছে:

(১) পরিচিতি ও বৈশিষ্ট:

- ভিশন

- মিশন

- লক্ষ্য

- নীতি

- ভ্যালুজ

- এলিক্স

- উদ্দেশ্য

- আইন-কানুন

(২) সম্পর্ক:

- অবস্থা

- আইন

- প্রেফারেন্স

- ধারণা

- চাহিদা

- শক্তি

- দূর্বলতা

- সুযোগ, ইত্যাদি।

(৩) পদ্ধতি এবং সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নীতিমালা:

- হিসাব

- রেজিস্ট্রার

- পরিশোধ পদ্ধতি

- ফাইল

- নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি

- নীতি ও নৈতিক অবস্থান

- শাস্তি ও পুরস্কার বিধান

- টেলিফোন ফ্যাক্স, কম্পিউটার ইত্যাদি ব্যবহার

- অডিট

- মনিটরিং

- মূল্যায়ন, ইত্যাদি।

(৪) সম্পদ:

- অর্থ

- যন্ত্রপাতি ও কারখানা

- গাড়ী/যানবাহন

- দক্ষতা

- আইডিয়া

- তথ্য ভান্ডার

- সময়

- জমি-জমা/ফাঁকা জায়গা, ইত্যাদি।

পরিচিতি ও সম্পর্ক অতীত থেকে প্রাপ্ত ও নির্ধারিত। অন্যদিকে পদ্ধতি ও সম্পদ ভবিষ্যতের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সংস্থার সংগে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পর্ক হলো তাঁদের আইন অনুযায়ী নিদৃষ্ট সময়ে অফিস আসতে হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ ঠিক সময়ে অফিসে আসছেন এই রেকর্ড না থাকলে তা প্রমাণ করা যাবে না। যদি শাখায় বা প্রতিটি ইউনিটে একটি হাজিরা রেজিস্ট্রার থাকে, যদি সকল কর্মকর্তা কর্মচারী নিদৃষ্ট সময়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন এবং তা যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণয়ন করা হয় তাহলে হাজিরা খাতাটি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতির দলিল হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

ম্যানডেট, ভিশন, মিশন, লক্ষ্য, কৌশল, অবজেকটিভস্ ইত্যাদি একটি প্রতিষ্ঠানের মূল দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়। ম্যানডেট, মিশন বা লক্ষ্য অর্জনের জন্য সংস্থা রুটিন কাজ, প্রোগ্রাম ও প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। প্রোগ্রাম বাস্তবায়নকল্পে সংস্থা যে সকল দলিল বা ডকুমেন্টশন প্রণয়ন করে তা হলো:

(১) বাস্তবায়ন মডিউল/নির্দেশিকা,

(২) প্রোগ্রাম ডিটেলস,

(৩) প্রকল্প দলিল, ইত্যাদি।

এ ধরণের ডকুমেন্টনস প্লানিং ডকুমেন্টস্ বা পরিকল্পনা দলিল হিসেবে পরিচিত। এ সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়নকালেও অনেক দলিল প্রণয়ন করা হয়। প্রতিষ্ঠানের নীতির ভিত্তিতে নির্ধারণ করা কর্মপদ্ধতি নির্ধারিত হয়। এ পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রতিষ্ঠানের সকলের অবশ্য কর্তব্য। তাই সরকারী কাজের অনুসৃত পদ্ধতি সম্বন্ধে ডকুমেন্টশন তৈরী করা আবশ্যক।

সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত নীচের নীতিমালা অনুসরণ করে:

(১) Economy: Maximum outputs using minimum inputs.

(২) Effeciency: Maximum outcome using minimum inputs.

(৩) Effectiveness: Maximum impact using minimum inputs.

সর্বোচ্চ Outputs, সর্বনিম্ন Inputs গুণগত মান নিশ্চিত করে না। সর্বোচ্চ Outcome, সর্বনিম্ন Inputs সর্বোচ্চ Impact এর নিশ্চয়তা দেয় না। তবুও সরকারী নীতিমালা এর বাইরে আসতে পারছে না। তাই অনুসৃত পদ্ধতি হলো:

- সর্বোচ্চ উচ্চ প্রতিযোগিতা,

- ক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন দর হার; এবং

- পরিবেশ এর উপর কোন প্রভাব বা অন্য কোন বিষয় বিবেচ্য নয়।

অনুসৃত পদ্ধতির ডকুমেন্টশন তৈরীর বর্তমান পদ্ধতিই হলো নথি। একটি সংস্থার একটি ইউনিটেই একাধিক নথি থাকে। ফলে আলাদাভাবে নথি ব্যবস্থাপনারও প্রয়োজন পড়ে। নথি ব্যবস্থাপনার জন্য ইউনিট পর্যায়ে নথি রেজিস্ট্রার রয়েছে। ডকুমেন্টস তৈরীর এর জন্য কতগুলো শর্ত প্রযোজ্য। তাহলো:

(১) স্থায়ীত্ব (duribility)

(২) সার্বজনীনতা (universality)

(৩) গ্রহণযোগ্যতা (reliability)

এ সকল শর্ত প্রতিপালন করার জন্য ডকুমেন্ট হিসেবে নথি, রেজিস্ট্রারগুলোর কিছু বৈশিষ্ট্য অবশ্যই থাকতে হবে। যেমন: রেজিস্ট্রার হবে,

(১) বাধানো শক্ত মলাটযুক্ত;

(২) প্রতিটি পাতা হবে পৃষ্ঠাংকনকৃত;

(৩) একটি রেজিস্টারে একাধিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করলে সূচিপত্র সংযুক্ত হতে হবে;

(৪) নথির শুরুতেই দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা মোট পাতা, বিষয় ইত্যাদি সম্বন্ধে প্রত্যয়ন করবেন, ইত্যাদি।

প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিটি রেজিস্ট্রারকে কয়েকটি কলামে ভাগ করে বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করা যেতে পারে।

প্রকল্প কাজ যথাসময়ে সমাপ্ত করতে হবে। অন্যদিকে প্রতিটি কাজ অনেকগুলো ইউনিট-এর উপর নির্ভরশীল। ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরীর জন্য অপারেশন ইউনিট ল্যাপটপ, ওয়েবক্যাম, ফিংগার প্রিন্ট স্ক্যানার চাই। সরবরাহের দায়িত্ব এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের। অপারেশন ইউনিট এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট হতে যন্ত্রপাতিগুলো চায় পারচেজ ইউনিট যন্ত্রপাতিগুলো ক্রয় করবে। ক্রয়ের জন্য অর্থের প্রয়োজন। বাজেট/একাউন্টস ইউনিট হতে অর্থের সংস্থান করতে হবে। যন্ত্রপাতিগুলোর পরিমাণ ও ধরণ অপারেশন বিভাগ-এর জানা রয়েছে। তা অনুসরণ করে বিনির্দেশ ও দরপত্র দলিল তৈরী করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন যোগাযোগ। যোগাযোগের ভিত্তিতে সংস্থার পরিচিতি, সংস্থার সম্পর্ক, পদ্ধতি এবং সম্পদের ভিত্তিতে ক্রয় সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। গৃহীত সিদ্ধান্ত সকলকে অবহিত করণের মাধ্যমেই সংস্থা তার লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগুতে থাকে।

আর্থিক রেকর্ড ব্যবস্থাপনা:

অন্য যেকোন রেকর্ড এর চেয়ে আর্থিক রেকর্ডকে অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়। আর্থিক রেকর্ড ব্যবস্থাপনায় যে সকল ব্যবস্থা বহুল পরিচিত তা হলো:

(১) নথি,

(২) জার্ণাল রেজিস্ট্রার,

(৩) লেজার রেজিস্ট্রার,

(৪) ক্যাশবুক রেজিস্ট্রার, ইত্যাদি।

নথিতে সাধারণত প্রসেস ব্যবস্থাপনা দিকগুলো তুলে ধরা হয়। অন্যদিকে রেজিস্ট্রারগুলো মূলত আর্থিক লেনদেন এর নিদর্শক এবং প্রমানিক দলিল। আর্থিক রেকর্ড অবশ্যই মাসভিত্তিক হবে। রেকর্ড এন্ট্রি, যাচাই এবং প্রত্যয়ন ছাড়া আর্থিক রেকর্ডের কোন গুরুত্ব থাকে না।

ক্যাশবুক ব্যাংক একাউন্টভিত্তিক খুলতে হয়। ব্যাংকের প্রতিটি জমা, উত্তোলন ক্যাশবুকে যথাযথভাবে প্রাপ্তির উৎস ও খরচের বিবরণসহ উল্লেখ থাকতে হবে। ক্যাশবুক ডাবল এন্ট্রি সিসটেম অনুসরণ করে লিখা বাঞ্ছনীয়।

আর্থিক ব্যবস্থাপনার রেকর্ডিং এর উৎসগুলো হলো-

(১) বাজেট/প্রকল্প বরাদ্দ ও অর্থ ছাড়,

(২) ক্রয় প্রস্তাব, মঞ্জুরী ও দাবী/ইনভয়েস/বিল,

(৩) ব্যাংক এডভাইস/চেক, ইত্যাদি।

আর্থিক রেকর্ড ব্যাংকের সংগে প্রতি মাসে রিকনসাইল করা বাধ্যতামূলক। যেকোন অসংগতির কারণ প্রতি মাসে আর্থিক প্রতিবেদনে পরিস্কারভাবে লিপিবদ্ধ থাকবে। এন্ট্রিগুলো মাসভিত্তিক আলাদা হবে। রেজিস্ট্রার পাতার উপরেই কোন মাস এবং কোন বছরের রেকর্ড তা উল্লেখ থাকবে।

নথি:

পত্র যোগাযোগ নথির উৎস। যোগাযোগ পত্রটি প্রথমে প্রাপ্তি রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করা হয়। সাধারণত একটি রেজিস্ট্রারেই প্রাপ্তি ও জারী লিপিবদ্ধ থাকে। বছরের ১লা তারিখ হতে সকল প্রাপ্তি ও জারীর ১ নম্বর দিয়ে প্রাপ্তি জারী রেজিস্ট্রার শুরু করা হয়। প্রাপ্তি ও জারী রেজিস্ট্রারের ২টি নমুনা নীচে দেয়া হলো:

প্রাপ্ত যোগাযোগের বিষয় হতে নিশ্চিত হতে হবে এ ধরণের কোন নথি বিদ্যমান কি না? নথি থাকলে প্রাপ্তি রেজিস্ট্রারে নথির নম্বর লিপিবদ্ধ করতে হবে। না থাকলে নথি রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে নতুন একটি নথি খুলতে হবে।

পদোন্নতি, বদলী, শাস্তি এ সকল নথিকে প্রশাসনিক নথি হিসেবে বিবেচনা করা যায়। নথি রেজিস্ট্রোরের সূচিপত্র ব্যবহার করে একাধিক বিষয়ের নথি খোলা যায়।

নথি: নথির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া সংক্রান্ত ডকুমেন্টস্ তৈরী করা হয়। ডকুমেন্টস্ এর বৈশিষ্ট এর কথা মাথায় রেখে নথির ৩টি অংশ বিভক্ত। যথা:

(১) পরিচিত ও প্রতিরক্ষা অংশ,

(২) যোগাযোগ অংশ, এবং

(৩) পর্যালোচনা অংশ।

নথির পরিচিতি ও প্রতিরক্ষা অংশ মূলত নথির মোটা কভার। কভারে নাম, নম্বর, নথি খোলার তারিখ এবং পূর্ববর্তী নথির সূত্র চিহ্নিত থাকে। যোগাযোগের বিষয়ের উপর ভিত্তি করে নথির নাম নির্ধারণ করা হয়। নথির নম্বর দেয়ার সময় সাধারণত শব্দ ও শুধু অংক অথবা অংক পদ্ধতি ব্যবহার করে নথি নম্বর দেয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় শুধু অংক ব্যবহার করে নথি নম্বার চূড়ান্ত করে। নির্বাচন কমিশনে মিশ্র পদ্ধতির প্রয়োগ রয়েছে। নিচে একটা উদাহরণ দেয়া হলো:

‘‘নিকস/প্রশা-১/৩৪-বা/২০০৮’’

এখানে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে নিকস, এটি প্রশাসন-১ শাখার বাজেট সংক্রান্ত ৩৪টি নথির একটি যা ২০০৮ সালে খোলা হয়েছে।

নথির যোগা অংশের প্রতিটি পাতা পেনসিল দিয়ে পৃষ্ঠাংনকৃত করা হয়। নোটাংশও পৃষ্ঠাংকনকৃত এবং তা প্যারা নম্বরযুক্ত হতে হবে। প্যারার ধারাবাহিক নম্বর শুরু হতে শেষ পর্যন্ত অনুসৃত হবে।

যোগা পত্রের নম্বর, তারিখ প্রাপ্তির উৎস, প্রাপ্তির তারিখ এবং পত্রপৃষ্ঠা যোগা অংশ উল্লেখপূর্বক নোট অংশের শুরু করা হয়। পত্রে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কোন আদেশ, নির্দেশ, মন্তব্য থাকলে তা নোটে ডকেট/লিপিবদ্ধ করতে হবে। নির্দেশ দানকারীর পদবী, তারিখ উল্লেখ করে এটা একটি প্যারা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

পরের প্যারায় যোগাযোগের বিষয় উল্লেখ করে যোগাপত্রের বিষয় ও কি চাওয়া হয়েছে লিখতে হবে। এর পরের প্যারায় বিষয়ের উপর অবস্থান, আইনগত বিধি-বিধান উল্লেখ করতে হবে। পরবর্তী প্যারায় প্রস্তাব লিপিবদ্ধ করে নোট প্রস্তাবের সমাপ্তি টানা যায়। যথাযথ কর্তৃপক্ষ প্রস্তাব অনুমোদন করলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াসহ সকল ডকুমেন্টশন প্রক্রিয়ার সমাপ্তি হবে। নোটে যোগা পত্রের কোন পুনরাবৃত্তি কোন ক্রমেই যথাযথ নয়। তা পরিহার করাই বাঞ্ছনীয়। সিদ্ধান্তের আলোকে খসড়া প্রণয়ন করে তা চূড়ান্ত করার পর যথাযথ কর্তৃপক্ষ স্বাক্ষর দিয়ে জারী করতে হবে। জারী করার পূর্বে জারী রেজিস্ট্রারে তা লিপিবদ্ধ করে জারী রেজিস্ট্রারের ক্রমিক নং জারী নম্বর হিসেবে পত্রের গায়ে চিহ্নিত করতে হবে।

খসড়া প্রণয়ন:

একটি ভালো ডকুমেন্টশন এর শর্তগুলো হলো:

(১) সহজবোধ্য

(২) ছোট্ট

(৩) পূর্ণাঙ্গ

এ সকল দিক বিবেচনা করে খসড়া অবশ্যই সহজবোধ্য, পূর্ণাঙ্গ এবং ছোট হতে হবে। চিঠির খসড়ায় থাকবে:

(১) হেড লাইন

(২) নম্বর ও তারিখ

(৩) প্রেরক ও প্রাপকের পদবী ও ঠিকানা

(৪) বিষয় ও সূত্র

(৫) সম্বোধন

(৬) মূল অংশ

(৭) বিনয়

(৮) স্বাক্ষরকারীর নাম ও পদবী, টেলিফোন নম্বর

সরকারীভাবে যে সকল পত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয় তা সচিবালয় নির্দেশিকায় চিহ্নিত করা আছে। বিশেষ প্রয়োজনে বিশেষ ধরণের পত্র ব্যবহার করা হয়। পত্রের আদলও একই সংগে পরিবর্তন করার প্রয়োজন পড়ে। পত্রগুলোর নাম নীচে তুলে ধরা হলো:

(১) সরকারী পত্র (Official letter)

(২) অফিস স্মারক (office memorandum)

(৩) আধা-সরকারী পত্র (demi-official letter)

(৪) অনানুষ্ঠানিক নোট (unofficial note)

(৫) অবগতির জন্য অনুলিপি (endorsment)

(৬) বিজ্ঞপ্তি (notification)

(৭) গৃহীত প্রস্তাব (resolution)

(৮) প্রেসনোট (press communique/note)

(৯) টেলিগ্রাম, টেলি প্রিন্টার, টেলেক্স সংবাদ (telegram, teleprinter and telex message)

(১০) অফিস আদেশ (office order)

(১১) পরিপত্র/সার্কুলার (circular)

(১২) জরুরীপত্র (express letter)

(১৩) সেভিংস গ্রাম (saving gram)

প্রতিটি পত্রের বিস্তারিত ব্যবহার, অংগ ও নমুনা সচিবালয় নির্দেশিকায় রয়েছে। তাই নমুনা সম্বন্ধে এই নোটে কোন আলোচনা করা হলো না।

আর্থিক ব্যবস্থাপনা:

আর্থিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ডকুমেন্টশন পদ্ধতিগুলো হলো:

(১) সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়াজাত করণের জন্য নথি;

(২) পাওনা পরিশোধের জন্য ইনভয়েস বা বিলের ভিত্তিতে জার্নাল;

(৩) চেকের ইস্যুর জন্য লেজার;

(৪) লেজারের ভিত্তিতে ব্যাংক একাউন্ট ভিত্তিক ক্যাশবুক, ইত্যাদি।

অন্যদিকে এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট এর জন্য যে ডকুমেন্টশন প্রয়োজন তা হলো:

(১) স্টোর রেজিস্ট্রার,

(২) মালামাল চলাচল রেজিস্ট্রার,

(৩) এ্যাসেট রেজিস্ট্রার,

(৪) এ্যাসেট বিনষ্টকরণ রেজিস্ট্রার, ইত্যাদি।

স্বাভাবিক রেজিস্ট্রার এর মত অ্যাসেট রেজিস্ট্রারগুলো হবে-

- প্রত্যয়নকৃত

- পৃষ্ঠাযুক্ত

- কোন মাসের এবং কোন বছরের স্টক রেজিস্টারে, ইত্যাদি।

এ্যাসেট রেজিস্টারের প্রতিটি এন্ট্রি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক যাচাইকৃত এবং স্বাক্ষরিত হবে।

সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া হিসেবে সভা, পরিদর্শন, মনিটরিং এবং মূল্যায়ন ইত্যাদি করা হয়ে থাকে। এ সকল পদ্ধতি অনুসরণ সংক্রান্ত রিপোর্ট ডকুমেন্টশন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন:

(১) সভার কার্যবিবরণী,

(২) পরিদর্শন প্রতিবেদন,

(৩) মনিটরিং প্রতিবেদন এবং

(৪) মূল্যায়ন প্রতিবেদন

সভার কার্যবিবরণী, পরিদর্শন প্রতিবেদন, মূল্যায়ন প্রতিবেদন দলিলগুলো তৈরী করার সময় নিচের বিষয়গুলো অবশ্যই চিহ্নিত করতে হবে।

প্রারম্ভিক অংশ:

- কার্যবিবরণী/প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নাম,

- সভা পরিদর্শন, মূল্যায়ন ইত্যাদির তারিখ, সময়, স্থান, সভাপতি পরিদর্শনকারী বা মূল্যায়নকারীদের নাম,

- উপস্থিত অন্যান্য কর্মকর্তা/ব্যক্তিবর্গের পরিচিত,

- স্বাগত বক্তব্য।

আলোচনা:

- আলোচনা/পর্যালোচনা অংশে বিদ্যমান পরিস্থিতি, তথ্য ও উপাত্ত উপস্থাপন, আলোচনা, পর্যালোচনা।

সিদ্ধান্ত:

- পর্যালোচনার আলোকে সিদ্ধান্ত;

- বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষের নাম;

- সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন, ইত্যাদি।

শেষ অংশ

- স্বাভাবিক সভার ক্ষেত্রে সভাপতির নাম, পদবী, স্বাক্ষর ও তারিখ

- কমিটি বা যৌথ দায়িত্বে কোন প্রতিবেদন প্রণীত হলে সকলের নাম, পদবী, স্বাক্ষর ও তারিখ, এবং

- নম্বর ও বিতরণ।

ডকুমেন্টশন-এর আদল ও উপস্থাপনা

ভাষার উপর দখল বেশী হলে যেকোন স্টাইলে ডকুমেন্টশন তৈরী করা যায়। কারণ একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তা স্টাইল ভেংগে নতুন স্টাইল তৈরী করতে পারেন। তিনি একটা উদ্দেশ্য নিয়ে তা করেন। একজন নবীন কর্মকর্তার স্টাইল জন্ম দেয়া সম্ভব নয়। তার সচিবালয় নির্দেশিকার একটি স্টাইল মেনে চলাই উত্তম।

ডকুমেন্ট লিখার সময় বানান, ব্যাকরণগত শুদ্ধতার দিকে নজর দিতে হবে। একটি ভালো ডকুমেন্টশন শুধুমাত্র ভুল বানান বা ব্যাকরণগত শুদ্ধতার অভাবে তার গুণগত মান নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হতে পারে।

ডকুমেন্ট তৈরী করার সময় এক প্যারার সংগে অন্য প্যারার যোগসূত্র হবে প্রাসংগিক। বক্তব্য হবে প্রাসংগিক ও ঘনিষ্ট। ডকুমেন্ট শিরোনাম, উপ-শিরোনাম দিয়ে বিভক্ত হবে। ডকুমেন্ট এ ব্যবহৃত টেবিল, চিত্র উপস্থাপনা হবে সুন্দর। একটি টেবিলে অত্যাধিক তথ্য থাকবে না। টেবিল ব্যবহার করার সময় মনে রাখতে হবে:

- শিরোনাম স্পষ্ট হবে;

- পরিমাপের একক উল্লেখ থাকবে; এবং

- টেবিলের তথ্য সহজবোধ্য হবে।

ডকুমেন্টশন তৈরী করার সময় মার্জিন উপরে, নিচে ও বামপাশে ² হলে ভালো হয়। ডানপাশে ০.৭৫² হলেও চলবে।

যেকোন ডকুমেন্ট এর ফ্রন্ট সাইজ ও লাইন স্পেস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৩ সাইজ-এর নীচের কোন ফ্রন্ট না ব্যবহার করাই ভালো। লাইন স্পেস ১/ রাখাই উত্তম।

শেষ কথা:

ডকুমেন্টশন একটি চলমান প্রক্রিয়া। স্থায়ী ডকুমেন্টেশন ছাপানো বই আকারের হলে তার স্থায়ীত্ব বেশী হবে। ডকুমেন্টশন এর লিখন হতে হবে:

- আকর্ষণীয়;

- পাঠকের উপযোগী; এবং

- পেশাদারিত্ব থাকতে হবে।

ডকুমেন্ট প্রণয়নের জন্য রয়েছে অনেক রীতি ও নীতি। রয়েছে গাইড লাইন, বিশেষ নির্দেশাবলী। তবে মনে রাখবেন,

‘‘সরল ও সহজই সুন্দরতম এবং কার্যকর।’’