কোমড় পর্যন্ত উঁচু ইট, সিমেন্ট ঘেরা কুয়া। পাশে ইটের সুরকি ফেলা হয়েছে। লম্বা মোটা পাটের রশিবাঁধা বালতি কুয়া থেকে পানি তোলার কাজে ব্যবহার করা হয়। কুয়ার পাড়ে পাড়ার ছেলে-বুড়ো, বউ-ঝিরা কলসিতে পানি ভরা, গোসল এবং হাত-মুখ ধুয়ে থাকেন। ছোটবেলা থেকেই এটা দেখি। আমি যে ঘরটায় থাকি তা থেকে কুয়াটা বড় জোর দশ হাত দূরে। পাশে একটা পেয়ারা গাছ এবং পরপর কয়েকটি লেবু গাছ। বাড়ীর দক্ষিণ দিকে বেশ দূরে শেষ সীমানায় বাঁশের বেড়া, টাটির দরজা, উপরটা পুরোপুরি ফাঁকা একটা সেনিটারি ল্যাট্রিন ছিল। এটাই আমাদের বাড়ী।
সব বাড়িতে পেয়ারা, আম, জাম, লিচুর গাছ আছে। আমাদের বাড়ীটা কুয়া, লেবু গাছ আর সেনিটারি ল্যাট্রিনটার জন্য একটু আলাদা ছিল। আশে-পাশে বাড়ীতে এগুলো ছিল না। বাড়িটাকে আরও একটু আলাদা করেছিল বাড়ীর আঙ্গিনা, কুয়ার দু'পাশে তিনটা নারিকেল গাছ। নারিকেল গাছগুলো আজও আমাদের বাড়ীর পরিচিতি হয়ে আছে। ছোট বেলায় লোকজনকে বলেছি কুয়ার পাড়ে নারিকেল গাছওয়ালা বাড়ীটা সরকার বাড়ী। রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে আমার জন্ম। স্থানীয় লোকজন আমার বাবাকে সরকার ডাকতেন। তাই আমাদের বাড়ীটা সরকার বাড়ী হিসাবে পরিচিত ছিল। গোদাগাড়ী বরেন্দ্র মাটি লাল এলাকা। লাল মাটিতে নারিকেল গাছ খুব একটা জন্মে না। তাই নারিকেল গাছ ঐ এলাকায় আর ছিল না বললেই চলে।